ঢাকা, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

নতুন আইনেই থেমে যাবে শেখ হাসিনার রাজনীতি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৯:০১:০১
নতুন আইনেই থেমে যাবে শেখ হাসিনার রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর খসড়া সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে। প্রস্তাবিত এই সংশোধনীতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

নতুন খসড়া অনুযায়ী, আদালত কর্তৃক ফেরারি ঘোষিত ব্যক্তি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। কোনো মামলার রায় ঘোষণার আগেই যদি কেউ শুনানিতে অনুপস্থিত থাকেন এবং আদালত তাকে ফেরারি ঘোষণা করে, তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বিধান কার্যকর হলে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থাকা বা বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা—including সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা—আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাতে পারেন। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে ফেরারি ঘোষণা ও হাজিরার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রার্থী বা তার প্রতিনিধিকে সরাসরি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুবিধা বাতিল করা হয়েছে, যা আত্মগোপনে থাকা ব্যক্তিদের জন্য নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ কঠিন করে তুলবে।

ইসির খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত আরও কিছু উল্লেখযোগ্য সংশোধনী:

‘না ভোট’-এর সুযোগ: কোনো আসনে একক প্রার্থী না থাকলে ভোটাররা ‘না ভোট’ দিতে পারবেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা সম্প্রসারণ: সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সম্পদের হলফনামা: দেশি-বিদেশি সম্পদের বিবরণ বাধ্যতামূলক; মিথ্যা তথ্য দিলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে।

নির্বাচনী জামানত বৃদ্ধি: প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

পোলিং এজেন্ট বিধিনিষেধ: এখন থেকে পোলিং এজেন্ট হতে হলে প্রার্থীর নিজ এলাকার ভোটার হতে হবে।

ভোট বাতিলের ক্ষমতা: নির্বাচন কমিশনের হাতে আবারও পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইভিএম বাতিল: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সব ধারা খসড়া থেকে বাতিল করা হয়েছে।

ব্যয়সীমা পরিবর্তন: একজন প্রার্থী ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। পূর্বে এটি ছিল সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা।

প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বৃদ্ধি: তাকে ভোটকেন্দ্রের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছে।

জোট প্রার্থিতায় প্রতীক: জোটগত নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে।

সাবেক নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন তুলি বলেন, “ফেরারি আসামিদের অযোগ্য ঘোষণার বিধানটি ইতিবাচক হলেও এর অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। প্রশাসন বা পুলিশ প্রভাব খাটালে নিরীহ অনেকেই হয়রানির শিকার হতে পারেন।”

খসড়া সংশোধনীটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে এটি সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পাবে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংশোধনীগুলো কার্যকর হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনগুলোর ফলে দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে এবং আসন্ন নির্বাচনে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে।

কেএইচ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে