ঢাকা, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০টি বড় ব্যর্থতা দেখে নিন

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১১:২১:৫৪
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০টি বড় ব্যর্থতা দেখে নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কেটে গেছে এক বছর। কিন্তু এত সময়েও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি, মব সহিংসতা ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ বেড়েই চলেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতেই কঠোর অবস্থান না নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পুলিশ বাহিনীর মনোবল কমে গেছে, তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। সরকার চাইলে অধ্যাদেশ জারি করে দ্রুত সংস্কার কার্যকর করতে পারতো, কিন্তু তেমন দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য নাসির উদ্দিন এলান বলেন, পুলিশের মনোবল ৪০ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। অনেকেই হতাশ ও ভীত।অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল হক মনে করেন, পুলিশ এখন রাজনৈতিক চাপে কাজ করে, যার ফলে তারা পেশাদারিত্ব হারাচ্ছে।পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান বলেন, "আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।"

গত এক বছরে ঢাকাসহ সারাদেশে ঘটেছে হাজারেরও বেশি খুন, কয়েক হাজার নারী ও শিশু নির্যাতন এবং শতাধিক মব-ভায়োলেন্স।পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশে ১,৯৩০টি খুন, ৩৬৬টি ডাকাতি, এবং ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে।

বিশ্ব সুফি সংস্থা বলেছে, গত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮০টির বেশি মাজারে হামলা চালানো হয়েছে।অন্যদিকে, পুলিশের উপরও হামলা বেড়েছে। গত আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুলিশের উপর ২২৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, ৫ আগস্টের পর সারা দেশে ৪৬০টি থানায় হামলা চালানো হয়। লুট হয় প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র ও ৬.৫ লাখ গোলাবারুদ। এর মধ্যে এখনও ১,৩৬৬টি অস্ত্র এবং ২.৫৭ লাখ গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি, যা পরিস্থিতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, সরকার শুরুতেই আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে জোরালো বার্তা দেয়নি। বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয়েছে।তিনি বলেন, "সরকারের কাজ শুধু নিন্দা বা বিবৃতি দেওয়া নয়, বরং ব্যবস্থা নেওয়া।"

অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, আইনের শাসন ছাড়া দেশে স্থিতি ফিরবে না। অপরাধী যেই হোক, ছাড় দেওয়া চলবে না।নাসির উদ্দিন এলান মনে করেন, সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিলে এখনও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব।

বিশ্লেষকদের মতে, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে এখনই নিচের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে:

পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর পুনর্গঠন

মব-সহিংসতার কঠোর দমন ও বিচার

অপরাধের বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে ব্যবস্থা

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যকর রোডম্যাপ ঘোষণা

সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত

জনগণের আস্থা ফেরাতে তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণ

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে অনেক প্রত্যাশা ছিল—বিশেষ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনপূর্ব স্থিতিশীলতা ফেরানো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সহিংসতা ও অপরাধ বাড়ছে, বিচারহীনতা রয়েছে, আর প্রশাসনিক ব্যর্থতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখনই যদি কার্যকর ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে