ঢাকা, বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

শেখ হাসিনাকে ঘিরে দিল্লিতে ছিল তিন চমক

২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৬:৪০:১৫
শেখ হাসিনাকে ঘিরে দিল্লিতে ছিল তিন চমক

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের নাটকীয় মুহূর্তগুলো এবং ভারতে তাঁর আশ্রয় লাভের নেপথ্যের ঘটনা নিয়ে একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। সংবাদমাধ্যমটির দিল্লি প্রতিনিধি শুভজ্যোতি ঘোষের দীর্ঘ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের দিনে ভারত সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল এবং কোন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

ভারতের অজ্ঞতা ও আকস্মিকতা

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট, যেদিন ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ, সেদিনও ভারতের শীর্ষ নীতি নির্ধারকরা শেখ হাসিনার পতন আঁচ করতে পারেননি। তারা মনে করেছিলেন, শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও শেষ পর্যন্ত সংকটটি ‘সারভাইভ’ করে যাবেন।

কিন্তু সেদিন দুপুরের পর পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে। দুপুর ১২টার পর ঢাকা থেকে দিল্লিতে পরপর দুটি ফোন আসে। প্রথম ফোনটি করেন স্বয়ং শেখ হাসিনা, ভারতে আশ্রয় চেয়ে। ভারত সরকার সঙ্গে সঙ্গেই ইতিবাচক সাড়া দেয়। এর কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ভারতের এয়ারফোর্স কমান্ডের কাছে দ্বিতীয় ফোনটি আসে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী সামরিক বিমানের অবতরণের অনুমতি চাওয়া হয়। সেই অনুমতিও দ্রুত দেওয়া হয়।

ভারতের কৌশলগত অবস্থান

বিবিসির প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চেয়েছিল, ভারত বিশেষ বিমান পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাক। কিন্তু ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব সেই অনুরোধ সরাসরি করে দেয়।

ভারতের অবস্থান ছিল, শেখ হাসিনাকে যদি আসতেই হয়, তবে বাংলাদেশের কোনো বিমানে বা হেলিকপ্টারেই আসতে হবে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দিল্লি চায়নি যে এমন কোনো বার্তা যাক যে তারা তাদের ‘বন্ধু’কে উদ্ধার করে এনেছে। বরং তারা চেয়েছিল, পরিস্থিতি এমনভাবে উপস্থাপিত হোক যাতে মনে হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই তাকে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দিয়েছে।

ব্রিটেনের ‘না’ এবং দোভালের অভিভাবকত্ব

প্রাথমিকভাবে ভারত সরকার ভেবেছিল, শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান হবে সাময়িক। ধারণা করা হয়েছিল, তিনি কিছুদিন ভারতে থেকে পরে অন্য কোনো দেশে, সম্ভবত ব্রিটেনে, পাড়ি দেবেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এই পরিকল্পনায় বাদ সাধে। নতুন প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সরকার ভারতকে জানিয়ে দেয় যে তারা শেখ হাসিনাকে ব্রিটেনে আসতে দিতে পারবে না।

এরপর থেকেই ভারতে শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদী নির্বাসিত জীবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। প্রতিবেদনে তাকে শেখ হাসিনার ‘অঘোষিত অভিভাবক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। দোভালের সঙ্গে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে এবং তিনিই এখন তার নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করছেন। প্রায় ৫০ বছর আগে পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর যেমন প্রণব মুখোপাধ্যায় তার অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছিলেন, এবার সেই দায়িত্ব পালন করছেন অজিত দোভাল।

সংসদে নীরবতা

৫ই আগস্ট যখন বাংলাদেশে এত বড় ঘটনা ঘটছে, তখনও ভারতীয় সংসদে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি উত্থাপনের চেষ্টা করলে স্পিকার তাকে থামিয়ে দেন। পরে বিরোধী দলগুলোকে আলাদাভাবে ডেকে জানানো হয় যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত এবং সরকার বিষয়টির ওপর নজর রাখছে। পরদিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট এ বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয় এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদকে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেন।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে