ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে 'অবাঞ্ছিত' শেখ হাসিনা

২০২৫ আগস্ট ০৪ ১১:৫০:৩৯
শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে 'অবাঞ্ছিত' শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: একসময়ের প্রতাপশালী শাসক, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ভারতের রাজধানীতে কার্যত একাকী ও বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছেন। ক্ষমতাধর এই নেত্রী, যার এক নির্দেশে বাংলাদেশের সচিবালয় পর্যন্ত কেঁপে উঠত, তিনি এখন নিজ দলের কাছেই এক প্রকার 'নিষিদ্ধ' নামে পরিণত হয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাচ্ছেন না দলের শীর্ষ নেতারাও, এবং ভারত সরকার তাকে একটি 'রাজনৈতিক বোঝা' হিসেবে বিবেচনা করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা দিল্লির অভিজাত এলাকা চাণক্যপুরীর একটি সুরক্ষিত ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন। তার বাসভবনের প্রবেশপথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে এবং কালো কাঁচের এসইউভি গাড়ি সেখানে সর্বক্ষণ পাহারায় থাকছে। এই বাসভবনে ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ছাড়া আর কারও প্রবেশের অনুমতি নেই।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মতো শীর্ষ নেতারাও দিল্লিতে একাধিক দিন অবস্থান করেও তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। এমনকি লন্ডন থেকে আসা প্রবাসী আওয়ামীপন্থী নেতারাও তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না পেয়ে ফিরে গেছেন। দলের অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

শেখ হাসিনার প্রতি দিল্লির মনোভাবের নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। যে ভারত একসময় তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, তারাই এখন তাকে এড়িয়ে চলছে। ভারতীয় প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম 'দ্য প্রিন্ট' এবং 'টাইমস নাউ'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি এখন শেখ হাসিনাকে একটি 'রাজনৈতিক বোঝা' হিসেবে দেখছে।

গত ১৫ বছর ধরে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ছিল মূলত শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে, যাকে বিশ্লেষকরা "ব্যক্তিনির্ভর পররাষ্ট্রনীতি" (Personality-Centric Foreign Policy) বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু এই একপেশে নীতির কারণে আজ ভারত বাংলাদেশে তার প্রভাব হারিয়ে একটি 'ভূ-কৌশলগত ফাঁদে' (Geostrategic Trap) পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

চিকিৎসা ভিসা বন্ধ, সীমান্তে পুশ-ইন এবং মাঝে মাঝে গুলি চালানোর মতো ঘটনাগুলো ভারতের পরিবর্তিত নীতিরই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতীয় কূটনীতিকরা এই অবস্থাকে 'কৌশলগত নীরবতা' (Strategic Silence) বলে অভিহিত করছেন।

এদিকে, বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন আন্তর্জাতিক মহলে ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এমনকি চীনও এই নতুন সরকারকে অপেক্ষাকৃত নীরব সমর্থন জানিয়েছে। জাতিসংঘের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কও বাংলাদেশে 'অংশগ্রহণমূলক শাসনে'র সম্ভাবনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে। এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় ভারত নতুন বন্ধু খোঁজার জন্য সময় নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "এই মুহূর্তে তার চেয়ে স্পর্শকাতর কেউ নেই দিল্লির জন্য। তাকে রাখাও বিপজ্জনক, সরানোও ঝুঁকিপূর্ণ।" এই পরিস্থিতিতে ভারত সম্ভবত সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে, যেন ইতিহাসই তাকে বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দেয়।

এই নীরব বন্দিদশাই হতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আলোচিত এক নারী রাজনীতিবিদের নির্মম প্রস্থান। কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বা বিদায়ী ভাষণ ছাড়াই, তিনি এখন ইতিহাসের এক পরিত্যক্ত অধ্যায়ে পরিণত হতে চলেছেন। একসময় তিনি বলেছিলেন, "ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা সারাজীবন মনে রাখবে।" কিন্তু বাস্তবতা হলো, স্বার্থপর ভারত স্বার্থ ছাড়া বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে না।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে