ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

হাসিনা-খালেদা নেতাদের চাঞ্চল্যকর আত্মীয়তার সত্য

২০২৫ জুলাই ৩০ ১৫:১২:৪৪
হাসিনা-খালেদা নেতাদের চাঞ্চল্যকর আত্মীয়তার সত্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত দ্বন্দ্ব দুটি দলকে ঘিরে—আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি। একদল স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছে, আরেক দল ছিল পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধী শক্তি। জনসমক্ষে এই দুই দলের নেতাদের কথোপকথনে যেন রাজনৈতিক যুদ্ধই চলে। বক্তৃতা, টকশো কিংবা নির্বাচনী প্রচারে একে অপরকে দোষারোপ করা যেন রুটিন কাজ। অথচ এই কঠিন বিভক্তির আড়ালে রয়েছে এক অন্য বাস্তবতা—আত্মীয়তা ও পারিবারিক সম্পর্কের গভীর জাল।

চট্টগ্রামের দুই 'চৌধুরী'র গল্প: চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্ব

চট্টগ্রাম রাজনৈতিকভাবে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দুই শক্তিশালী নেতা ছিলেন—আওয়ামী লীগের প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বিএনপির যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সম্পর্কে তারা চাচা-ভাতিজা। অথচ রাজনৈতিক মঞ্চে তাদের অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। এই দুই পরিবারের মধ্যকার আত্মীয়তা এখানেই থামে না—এর বিস্তার রয়েছে আরও বহু নেতার মধ্যে।

সালমান এফ রহমান ও সালাউদ্দিন কাদের: খালাতো ভাই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান হলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর খালাতো ভাই। একজন আওয়ামী লীগের অন্যতম আর্থিক নীতিনির্ধারক, আরেকজন ছিলেন বিএনপির উগ্র অবস্থানের প্রতীক।

বড় পরিসরে আত্মীয়তা: বেয়াই, মামা, খালা

রাশেদ খান মেনন ও সেলিমা রহমান: ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেননের আপন ছোট বোন সেলিমা রহমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।

শেখ সেলিম ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু: শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ সেলিম ও বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী টুকু—একে অপরের বেয়াই। টুকুর মেয়ে বিবাহিত শেখ সেলিমের ছেলের সঙ্গে।

আন্দালিব রহমান পার্থ ও শেখ পরিবার: পার্থ শেখ হাসিনার ভাগ্নে। শেখ সেলিম তার মামা এবং তার শ্বশুর শেখ হেলাল—আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য।

মোরশেদ খান ও সালমান এফ রহমান: মোরশেদ খানের মেয়ে বিবাহিত সালমান এফ রহমানের ছেলের সঙ্গে—এঁরাও বেয়াই।

আব্দুল মান্নান ভুইয়া ও শেখ কবির: বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও শেখ হাসিনার চাচা বেয়াই ছিলেন।

আব্দুল্লাহ আল নোমান ও আবদুল্লাহ আল হারুন: বিএনপি নেতা নোমানের ভাই ছিলেন আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা।

সাঈদ ইস্কান্দার ও আহসানউল্লাহ মনি: খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার এবং আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মনি—তাঁরাও বেয়াই সম্পর্কে।

আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও বসাত উল্লাহ চৌধুরী: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা বসাত উল্লাহ চৌধুরীর জামাতা।

সাইফুর রহমান ও এম আর সিদ্দিকী: অর্থনীতিবিদ ও বিএনপি নেতা সাইফুর এবং আওয়ামী লীগের এম আর সিদ্দিকীও বেয়াই ছিলেন।

যদিও সংবাদমাধ্যমে বা রাজপথে এই নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, কিন্তু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি, সৌজন্যবোধ এবং পারস্পরিক যোগাযোগে সম্পর্কের অন্য এক রূপ দেখা যায়। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদর্শের চেয়ে পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো অনেক গভীরে প্রোথিত। এসব সম্পর্ক কখনো রক্ষার সেতুবন্ধ, আবার কখনো গোপন দ্বন্দ্বের উৎস হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা যতই দ্বিধাবিভক্ত হোক না কেন, বহু নেতার ব্যক্তিজীবনে রয়েছে আন্তঃদলীয় আত্মীয়তা ও পারিবারিক যোগাযোগ। এসব সম্পর্ক একদিকে যেমন রাজনীতির বাইরের বাস্তবতা প্রকাশ করে, অন্যদিকে রাজনৈতিক নাটকের পেছনের পর্দা একটু তুলে ধরে। জনতার সামনে যাঁরা একে অপরকে ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘অপরাধী’ বলেন, তাঁরা হয়তো রাতের বেলায় এক টেবিলে নাতির জন্মদিনে কেক কাটেন। এই দুই মুখের বাস্তবতাই বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে জটিল ও রঙিন অধ্যায়।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে