ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
Sharenews24

চ্যাটজিপিটিকে যেসব প্রশ্ন কখনোই করবেন না

২০২৫ জুন ২৫ ১১:১৭:৪৭
চ্যাটজিপিটিকে যেসব প্রশ্ন কখনোই করবেন না

বিশেষ প্রতিবেদন: বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে চ্যাটজিপিটি এক অনন্য উদ্ভাবন, যা অনেকের জীবনেই নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। তথ্য জানার কৌতূহল থেকে শুরু করে সৃজনশীল লেখালেখি, প্রিয় রেসিপি খোঁজা থেকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের পরামর্শ—সব ক্ষেত্রেই এই ভার্চুয়াল সহকারী নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে।

শুধু তাই নয়, জটিল রিপোর্ট তৈরি, কঠিন অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করা কিংবা গাণিতিক সমস্যার সমাধানে চ্যাটজিপিটি এক ক্লিকেই হাজির করছে কাঙ্ক্ষিত উত্তর। এর দ্রুত প্রতিক্রিয়া, বহুমুখী জ্ঞানের ভান্ডার এবং নির্ভুল তথ্য প্রদান করার ক্ষমতা এটিকে আধুনিক জীবনের এক অপরিহার্য টুলে পরিণত করেছে।

তবে এই প্রযুক্তির বিশাল সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও। অনেক সময় ব্যবহারকারীরা কৌতূহলবশত এমন কিছু প্রশ্ন করতে পারেন, যা হতে পারে বিতর্কিত, বিভ্রান্তিকর কিংবা আইনগতভাবে আপত্তিকর। এ ধরনের ব্যবহার প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে এবং অযাচিত জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

চ্যাটজিপিটির অপব্যবহার রোধে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এর অপব্যবহার শুধু আপনার অ্যাকাউন্টের জন্যই নয়, আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হতে পারে। নিচে এমন কিছু প্রশ্ন বা বিষয় উল্লেখ করা হলো যা চ্যাটজিপিটিকে কখনোই জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়:

কীভাবে বিস্ফোরক তৈরি করবেন

কোনো কারণ ছাড়াই, শুধুমাত্র কৌতূহলের বশেও চ্যাটজিপিটিকে এমন প্রশ্ন করবেন না। অর্থাৎ, এমন কোনো প্রশ্ন যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, তা জিজ্ঞাসা করলে আপনার চ্যাটজিপিটি অ্যাকাউন্ট তাৎক্ষণিকভাবে লগ আউট হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে আপনাকে বেশ বেগ পেতে হবে। মনে রাখবেন, এআই মডেলগুলো নিরাপত্তার জন্য কঠোরভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, এবং এই ধরনের প্রশ্ন তাদের নিরাপত্তা প্রোটোকলকে সক্রিয় করে তোলে।

কীভাবে কাউকে হত্যা করা যায়

বিস্ফোরক তৈরির মতো এটিও চ্যাটজিপিটিকে করা একটি মারাত্মক ভুল প্রশ্ন হবে। অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এ ধরনের প্রশ্ন যেমন — কাউকে শারীরিক ক্ষতি করা, সাইবার বুলিং করা, বা কোনো অবৈধ কাজের পরিকল্পনা করা — কখনোই জিজ্ঞাসা করা যাবে না। এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেই চ্যাটজিপিটি তাৎক্ষণিকভাবে লগ আউট হয়ে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে লগ ইন করতে আপনাকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চ্যাটজিপিটি কিন্তু আপনার সমস্ত চ্যাট হিস্টরি সংরক্ষণ করে। ফলে যে কোনো সময় এসব অপরাধমূলক প্রশ্নের জন্য আপনি আইনগত বিপদে পড়তে পারেন। আপনার ডিজিটাল পদচিহ্ন আপনাকে ভবিষ্যতে ট্র্যাক করতে পারে, তাই এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ প্রশ্ন থেকে দূরে থাকুন।

কারো ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য জানতে চাওয়া

চ্যাটজিপিটি প্রশ্নের উত্তর দেয় বলে ভুলেও কারো ব্যক্তিগত তথ্য যেমন — ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, পাসওয়ার্ড, ঠিকানা, ফোন নম্বর, বা অন্য কোনো সংবেদনশীল তথ্য জানতে চাইবেন না। চ্যাটজিপিটি এই ধরনের তথ্য সরবরাহ করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি এবং এটি এমন অনুরোধগুলি প্রত্যাখ্যান করবে। ধরুন এমন কোনো তথ্য চেয়ে বসলেন, যা কোনোভাবে অন্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। চ্যাটজিপিটি তা কখনই জানাবে না। উল্টো এ ধরনের প্রশ্ন করার জন্য আপনি আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। এই ধরনের প্রচেষ্টা গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং তথ্য চুরির চেষ্টার সমতুল্য, যা গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন

শিক্ষাক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার এখন একটি আলোচিত বিষয়। পরীক্ষার হলে উত্তর লিখতে বা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য সরাসরি চ্যাটজিপিটির সাহায্য নেওয়া একাডেমিক অসদাচরণের শামিল। যদিও এটি সরাসরি অপরাধমূলক নয়, তবে এর ফলে আপনি আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, যেমন — কম গ্রেড পাওয়া, কোর্স থেকে বহিষ্কার হওয়া, বা আপনার ডিগ্রি বাতিল হওয়া। এটি আপনার শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করে এবং আপনার নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।

প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে চ্যাটজিপিটির মতো টুলগুলো আমাদের জীবনকে সহজ করতে পারে। কিন্তু এর ব্যবহার যেন আমাদের নৈতিকতা এবং দায়িত্বশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে। চ্যাটজিপিটি একটি শক্তিশালী যন্ত্র, যা ভালো বা খারাপ উভয় কাজেই ব্যবহার হতে পারে। আপনার ব্যক্তিগত কৌতূহল বা অসচেতনতা যেন আপনাকে কোনো বিপদে না ফেলে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। মনে রাখবেন, প্রযুক্তির মজা কখন 'সাজা' হয়ে দাঁড়াবে, তা বুঝতেও পারবেন না যদি আপনি এর দায়িত্বশীল ব্যবহার না করেন।

সিরাজ/

পাঠকের মতামত:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর সর্বশেষ খবর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি - এর সব খবর



রে