ঢাকা, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
Sharenews24

ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ: দুঃসময় ঘনিয়ে আসছে ভারতের!

২০২৫ জুন ২৩ ১৮:৩১:৩৫
ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ: দুঃসময় ঘনিয়ে আসছে ভারতের!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নয়, এটি ভারতের জন্য এক বড় ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে। ভারতের পশ্চিমমুখী ভূরাজনৈতিক কৌশলের কেন্দ্রে থাকা চাবাহার বন্দরের উন্নয়ন, নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর (আইএনএসটিসি) গঠন এবং ইরানের সঙ্গে শক্তিশালী জ্বালানি অংশীদারিত্ব—সবই এই সংঘাতের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

চাবাহার বন্দর ভারতের জন্য পাকিস্তানের পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে বিকল্প সংযোগ তৈরির এক কৌশলগত সেতু। ভারত এই বন্দরের শহিদ বেহেস্তি টার্মিনালের উন্নয়নে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন ডলার (৭৫০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছে এবং ক্রেনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। এই বন্দরের সঙ্গে যুক্ত চাবাহার-জাহেদান রেললাইন (প্রায় ৭০০ কিমি দীর্ঘ) এবং আইএনএসটিসি করিডোর ভারতকে রাশিয়া ও ইউরোপে পণ্য পাঠানোর সাশ্রয়ী ও দ্রুত পথ খুলে দিয়েছে।

আইএনএসটিসি হলো ৭ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট করিডোর, যা ভারত, ইরান, আফগানিস্তান, রাশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে পণ্য পরিবহণে সহায়তা করবে। তবে, এই যুদ্ধ পরিস্থিতি সমস্ত অবকাঠামো নির্মাণে বিলম্ব ঘটাতে পারে, এমনকি থামিয়েও দিতে পারে, যা ভারতীয় প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

ইরানের সঙ্গে ভারতের এক প্রধান যোগসূত্র ছিল অপরিশোধিত তেল আমদানি, যা ভারতের মোট তেলের চাহিদার প্রায় ১২ শতাংশ পূরণ করত। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে আমদানি কমলেও, ভবিষ্যতে জ্বালানি সহযোগিতা পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছিল।

কিন্তু সংঘাতময় পরিস্থিতি সেই সম্ভাবনাও অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর বা সুয়েজ খালের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ বিঘ্নিত হলে জাহাজ পরিবহণ খরচ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ১০০ ডলার প্রতি ব্যারেলের ওপরে নিয়ে গেলে ভারতের অর্থনীতি প্রবল চাপে পড়বে। জ্বালানি ছাড়াও শুকনো ফল, রাসায়নিক ও সিমেন্টের মতো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ব্যাঘাত দেখা দেবে।

ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তির স্তরে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। অপরদিকে, ইরান দীর্ঘকাল ধরে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধির সহযোগী। এই দুই বিপরীতমুখী অংশীদারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির এক বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

যদি ভারত একপক্ষকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাহলে অপরপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে কৌশলগত দরজা বন্ধ করে দিতে পারে। চাবাহার বন্দর, আইএনএসটিসি করিডোর ও জ্বালানি সহযোগিতা সবই এখন অনিশ্চয়তার কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। কারণ এই সংঘাত ভারতের ভবিষ্যৎ কৌশলগত স্বপ্নের দিক নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এটি ভারতের জন্য বাড়তি চিন্তার উৎস হিসাবে সামনে আসছে।

মিরাজ/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে