ঢাকা, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
Sharenews24

‘হাসনাত ও সারজিসকে হত্যা’র ভয়াবহ পরিকল্পনা ফাঁস

২০২৫ মে ৩০ ১০:৪৮:৪৭
‘হাসনাত ও সারজিসকে হত্যা’র ভয়াবহ পরিকল্পনা ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে ঘিরে উঠে এসেছে বিস্ময়কর ও জটিল এক চিত্র, যার মধ্যে রয়েছে গোপন অভিযানে দেশে আনা, বিদেশে হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা, গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ। কুষ্টিয়া শহরে যৌথ বাহিনীর হাতে সম্প্রতি গ্রেপ্তারের পর থেকে তার দেওয়া প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো আনুষ্ঠানিক আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই রাতের আঁধারে সিলেট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আনা হয় সুব্রত বাইনকে। তার অবস্থান ছিল ভারতের কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW (R&AW) ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা MI তাকে বহুদিন ধরে নজরে রেখেছিল। ধারণা করা হয়, তারা সুব্রতকে মূল্যবান সম্পদ (asset) হিসেবে ব্যবহার করছিল।

তাকে দেশে ফেরানোর জন্য কোনো বন্দি বিনিময় চুক্তি ছিল না। বরং অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ মদদে এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসানের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ অভিযানে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়।

সূত্র অনুযায়ী, সুব্রতকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছিল যুক্তরাজ্যে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হত্যার জন্য। পরিকল্পনায় ছিল, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে। সফলতা পেলে সুব্রতকে মেরে ফেলে প্রমাণ মুছে ফেলার কথাও ছিল পরিকল্পনায়।

এই ‘মিশনের’ জন্য তাকে স্নাইপার প্রশিক্ষণ, রাইফেল ব্যবহারের কৌশল, এবং টার্গেট শনাক্ত করে গুলি চালানোর সক্ষমতা গড়ে তোলা হয়। এমনকি পাকিস্তানি পাসপোর্টে লন্ডনে পাঠিয়ে কাজটি সম্পন্ন করার পর কানাডায় পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও ছিল।

২০২৫ সালের মে মাসে যৌথ বাহিনী কুষ্টিয়ার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সুব্রত বাইন ও তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি ৮ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

রিমান্ডে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার দল রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ্য করে টার্গেট কিলিং এর পরিকল্পনা করেছিল, যার মধ্যে বিএনপি, জামায়াত ও নবগঠিত এনসিপির নেতারা ছিলেন। লক্ষ্যমাত্রায় ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সার্জিস আলমসহ অনেকে।

অস্ত্র আনা হতো সীমান্ত হয়ে, আর তা পৌঁছে দেওয়া হতো রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় — মগবাজার, গুলশান, শাহবাগ, বাড্ডা প্রভৃতি স্থানে সক্রিয় সন্ত্রাসী চক্রের হাতে।

সুব্রত বাইনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মিশনের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নিষিদ্ধ ঘোষিত উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সম্পৃক্ততা ছিল। তিনি দাবি করেন, এসব হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।

গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এনটিএমসির সাবেক ডিজি জিয়াউল হাসান, এবং ডিআইজি মনিরুল ইসলাম সরাসরি সুব্রতের সঙ্গে দেখা করে পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত করেন। এমনকি লন্ডনে সহযোগিতার জন্য হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের নামও আসে সুব্রতের বক্তব্যে।

২০২২ সালে মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সুব্রত বাইন নিহত হয়েছেন। ওই খবরে বিশ্বাস করে তার মা কমলিনী বাইন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু বাস্তবে সে সময় সুব্রত বাইন জীবিত ছিলেন এবং সরকারের একটি স্পর্শকাতর মিশনে অংশ নিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে