ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
Sharenews24

ঋণের ভারে নাকাল আইসিবি, প্রস্তাব বিশেষ তহবিল গঠনের

২০২৫ মে ২৩ ১২:৪১:৩১
ঋণের ভারে নাকাল আইসিবি, প্রস্তাব বিশেষ তহবিল গঠনের

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণের ভারে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। প্রতি মাসে প্রায় ৭০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে মারাত্মক আর্থিক চাপে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ঋণ বোঝা কমাতে এবং আবারও শেয়ারবাজারে সক্রিয় বিনিয়োগের সক্ষমতা ফিরে পেতে সরকারের কাছে বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে আইসিবি।

গত ২২ মে (বৃহস্পতিবার) অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে এক বৈঠকে এই প্রস্তাব তুলে ধরে আইসিবির প্রতিনিধিদল। বৈঠকে আইসিবির ঋণ পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ করণীয় এবং শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেয়ারবাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করছেন। তিনি বিনিয়োগকারীসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

আইসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিগত সরকার আমলে বিএসইসি ও সরকারের উৎসাহে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ সুদে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিল। বাজারে ধস নামায় সেই বিনিয়োগে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। ক্ষতির বিপরীতে প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতার কারণে আইসিবি বর্তমানে চরম সংকটে পড়েছে।

আইসিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে আইসিবির দায়ে থাকা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ, যার গড় সুদের হার ১২ শতাংশ। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির আয় পর্যাপ্ত নয়। যদিও সম্প্রতি ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, তবুও প্রতি মাসে ৭০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধের চাপ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে আইসিবি সরকারের কাছে একটি নিরপেক্ষ পরিচালনা পর্ষদের অধীনে বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, তহবিলের অর্থ আইসিবি বিনিয়োগ করবে, তবে ব্যবস্থাপনা ও তদারকির দায়িত্বে থাকবে সরকার মনোনীত নিরপেক্ষ বোর্ড। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী তহবিল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেবে এই বোর্ড—প্রয়োজনে শেয়ার কেনা ও বাজার স্থিতিশীল রাখা হবে, আবার বাজার উত্তপ্ত হলে তা বিক্রি করে লাভ তোলা হবে।

আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, “আমরা আশা করছি, আসন্ন বাজেটে কিছু প্রণোদনা আসবে। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে ১০ শতাংশ পার্থক্য রাখার প্রস্তাব দিয়েছি। এছাড়া, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড বিতরণের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের মুনাফার ২০ শতাংশ প্রভিশনের জন্য রেখে বাকি ৮০ শতাংশ বিতরণের প্রস্তাব দিয়েছি।”

আইসিবির চলমান সংকট সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই আর্থিক বিপর্যয় মূলত পূর্ববর্তী সরকারের সময় নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ঋণের ফল। বর্তমান সরকার ও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের অধীনে এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম হয়নি। আর্থিক সংকট উত্তরণে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি।”

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে