ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
Sharenews24

বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় শেয়ারবাজারে সিন্ডিকেট চক্রের লাগাম টানতে হবে

২০২৫ মে ১২ ১৫:৪০:৪৮
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় শেয়ারবাজারে সিন্ডিকেট চক্রের লাগাম টানতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার ঘিরে আশাবাদী ধারা তৈরি হলেও এর গতি রোধে একটি গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে ইঙ্গিত মিলছে। সোমবার (১২ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনচিত্র এবং শীর্ষ কোম্পানিগুলোর দরপতন বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়, বাজারে কৃত্রিমভাবে চাপ সৃষ্টি করে সূচককে নিচে নামিয়ে রাখার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে।

লেনদেন বাড়লেও দাম কমেছে

সোমবার ডিএসইতে মোট ৩৬৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ তিন কোম্পানি- এনআরবি ব্যাংক, বীচ হ্যাচারি ও বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার, যা মোট লেনদেনের ১৩.৮৫ শতাংশ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই তিন কোম্পানির বড় লেনদেনের মধ্যেও শেয়ারদর কমেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এত বড় লেনদেনের পরও শেয়ারদর কমে যাওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক এবং প্রশ্ন তৈরি করে—কে বা কারা এই চাপ তৈরি করছে?

সেল প্রেসার—কার উদ্দেশ্যে?

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী বাজারের উত্থান ঠেকাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শেয়ার বিক্রি করছে বা দাম বাড়তে দিচ্ছে না। এই কৌশলে তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক তৈরি করছে, যাতে বাজারে পুঁজি আসা ব্যাহত হয় এবং বর্তমান সরকারের সংস্কারমুখী উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

একজন সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক শেয়ারনিউজকে বলেন, "বড় অঙ্কের শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে, কিন্তু দাম বাড়ছে না। বরং দাম কমছে। এটা প্রমাণ করে যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে সেল প্রেসার তৈরি করছে।"

তিনি বলেন, বাজারে এমনিতেই বড় বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে, তারা এখন আরও মরিয়া হয়ে উঠছে। যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে বাজারে সক্রিয় হচ্ছেন।

কারা এই গোষ্ঠী?

বিশ্লেষকদের ধারণা, এই গোষ্ঠীর মধ্যে থাকতে পারে—

  • কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, যারা বাজারে স্বল্পমেয়াদি লাভের কৌশলে অভ্যস্ত।

  • বাজারে প্রভাব বিস্তারকারী কিছু গ্রুপ, যাদের অতীতে অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল।

  • রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত একটি মহল, যারা সরকারের অর্থনৈতিক অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাজারকে ব্যবহার করতে চায়।

প্রতিরোধে করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে আরও সক্রিয় হতে হবে। বিশেষ করে—

  • ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের লেনদেন বিশ্লেষণ করে অস্বাভাবিক কার্যকলাপ চিহ্নিত করা।

  • ম্যানিপুলেটিভ ট্রেডিংয়ের বিরুদ্ধে জরুরি তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

  • বাজারে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব নিয়ন্ত্রণে বিনিয়োগকারী শিক্ষার উদ্যোগ জোরদার করা।

  • বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজেট সহায়ক পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন।

    বর্তমান বাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে বাজার-নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীর তৎপরতা চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অন্যথায়, সরকারের সংস্কার উদ্যোগ ও বাজার ঘিরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা আবারও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে