ঢাকা, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদে বড় পরিবর্তনের সুপারিশ

২০২৫ এপ্রিল ২৭ ০৮:৩৩:২৮
প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদে বড় পরিবর্তনের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ করেছে, একজন ব্যক্তি তাঁর জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দুইবারই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। অর্থাৎ, একবার কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে যদি সেই মেয়াদ অর্ধসমাপ্ত হয়—তবুও তা একটি "বার" হিসেবে গণ্য হবে। সেই হিসেবে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আর কেউ ওই পদে আসীন হতে পারবেন না।

কমিশন সূত্রগুলো বলছে, এটি দুই ‘মেয়াদ’ নয়, দুই ‘বার’ প্রধানমন্ত্রিত্বের একটি সীমারেখা। এমনকি একজন ব্যক্তি একদিনের জন্যও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেও সেটি একটি দায়িত্ব পালন হিসেবে বিবেচিত হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের সহকারী মনির হায়দার জানান, “আমরা সুপারিশ করেছি যে টানা দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। মেয়াদ পূর্ণ না হলেও সেটি একটি ‘বার’ হিসেবে ধরা হবে।”

এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও প্রধানমন্ত্রী পদের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ফলে এই সীমাবদ্ধতা "বারের" ভিত্তিতে প্রযোজ্য হবে।

বিএনপির মতে, কেউ পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। বিরতি দিয়ে হলেও তৃতীয়বার দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ রাখা উচিত।

জামায়াত ইসলামীও বলেছে, একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তা পরপর হোক বা না হোক—তবে মোট মেয়াদের সীমা থাকা উচিত।

কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল—একজন ব্যক্তি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তবে টানা দুইবারের বেশি নয়। তবে এ নিয়েও রাজনৈতিক ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে খালেদা জিয়া চারবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন—১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানের পর। যদিও তার মেয়াদগুলো সবসময় পূর্ণ হয়নি।

কমিশন জানায়, তার এই চারবারের শপথ নেওয়াই উদাহরণস্বরূপ দেখায় কেন "দুইবার" নিয়ম প্রণয়ন জরুরি। কারণ মেয়াদের দৈর্ঘ্য নয়, বরং কয়বার দায়িত্ব পালন করেছেন সেটাই এখানে বিবেচ্য।

বিশ্ব রাজনীতির প্রসঙ্গে ভারতের অটল বিহারি বাজপেয়ী এবং যুক্তরাজ্যের বরিস জনসন, লিজ ট্রাস ও ঋষি সুনাক—একই সংসদে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব নেওয়ার পরও গণ্য হয়েছেন আলাদা আলাদা প্রধানমন্ত্রিত্বের মধ্যে।

কমিশন বলছে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে কেউ দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকার সুযোগ পাবেন না। এটি ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ রোধ করবে এবং গণতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করবে।

তবে কমিশনের সদস্যদের স্বীকারোক্তি, এটি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের মতামত ভিন্ন হওয়ায় এখনো একটি চূড়ান্ত ফর্মুলা আসেনি।

সম্ভাব্য নিয়মের খসড়া:

একজন ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ২ বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন

একটি মেয়াদ পূর্ণ না হলেও সেটি "একবার" হিসেবে গণ্য হবে

সংসদ ভেঙে গেলে বা পদত্যাগ করলেও সেই সময় গণনায় পড়বে

রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া সংসদ ভাঙা যাবে না

বর্তমানে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির মেয়াদে সীমাবদ্ধতা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তা নেই। বিশ্বে প্রায় ৬২টি দেশে প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ সীমিত করা হয়েছে, অথচ প্রধানমন্ত্রী পদের ক্ষেত্রে এমন দৃষ্টান্ত বিরল।

কমিশনের এক সদস্য বলেন, “বিশ্বে এমন নজির খুব কমই রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন আইন করতে হচ্ছে কারণ কেউ সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।”

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে