ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

এবি ব্যাংকে ভয়াবহ অনিয়ম: কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপি

২০২৫ এপ্রিল ২২ ০৯:২৪:০৯
এবি ব্যাংকে ভয়াবহ অনিয়ম: কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকে অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনা ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে ব্যাংকটি একের পর এক অনিয়ম করে চলেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঋণ বিতরণ, খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত দেখানো, একক গ্রাহক ঋণসীমা লঙ্ঘন, সরকারি সিকিউরিটিজে ক্ষতি গোপন করা এবং মিথ্যা তথ্য প্রদান। এসব কারণে ব্যাংকটি উচ্চ খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গুলশান শাখাকে শুধু কৃষি ও এসএমই ঋণের অনুমোদন ছিল। অথচ ব্যাংকটি এসএস স্টিল, ফু-ওয়াং সিরামিকস, সালেহ স্টিল ও ওয়েম্যাক্স ইলেকট্রোডের মতো প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১১টি এলসি সুবিধা দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান একই গ্রুপের হলেও পৃথক দেখিয়ে একক ঋণসীমা লঙ্ঘন করেছে ব্যাংক।

ব্যাখ্যা চাওয়া হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শাখার কার্যক্রম সম্পর্কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও অবগত ছিলেন না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট না হয়ে এবি ব্যাংককে ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর দুই লাখ টাকা জরিমানা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন অনিয়ম ব্যাংকিং রীতিনীতির গুরুতর লঙ্ঘন এবং জনআস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।

এ রকমই আরেকটি ঘটনা ঘটে গ্লোবাল করপোরেশনসের ক্ষেত্রেও। কো-অর্ডিনেটরের আপত্তি সত্ত্বেও ব্যাংক ১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার গ্যারান্টি নবায়ন করে এবং খেলাপিযোগ্য প্রতিষ্ঠানটিকে খেলাপি দেখায়নি।

একই সঙ্গে, সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপকে অনৈতিক সুবিধা দেয় এবি ব্যাংক। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ তিনটি গ্রুপে বিভক্ত দেখিয়ে একক গ্রাহক ঋণসীমা এড়িয়ে ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রিন্সিপাল ও নিউ এলিফ্যান্ট রোড শাখায় বকেয়া রয়েছে প্রায় ১,৮৪৪ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেকেই খেলাপিযোগ্য হলেও ব্যাংক তাদের নিয়মিত দেখিয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য গোপন করেছে। ফলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কারণে ব্যাংককে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে।

ব্যাংকটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬,৩১৯ কোটি টাকা খেলাপি দেখিয়ে সিআইবি আপডেট করতে নির্দেশ পেলেও তা মানেনি। পরবর্তীতে আরও ৯,৩৫০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপিতে পরিণত হওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংক তা গোপন করে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও নির্দেশ দেয় খেলাপি করার জন্য, কিন্তু এবি ব্যাংক সেসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় চায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই আবেদন বাতিল করে খেলাপি করতে বলে। কিন্তু ব্যাংক তার সেপ্টেম্বর ২০২৪ সিএল বিবরণীতে এসব ঋণ খেলাপিতে দেখায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এবি ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে খেলাপিযোগ্য ঋণ খেলাপিতে পরিণত করছে না, যা সরাসরি নির্দেশনার লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ব্যাংকটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ দেখিয়েছে ১০,১১৫ কোটি টাকা, অথচ প্রকৃত খেলাপি ২৩,১৬৩ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের মোট ঋণের ৭১ শতাংশ।

সরকারি সিকিউরিটিজের বিক্রয়জনিত ৫৯৬ কোটি টাকার ক্ষতি গোপন করে ব্যাংক তা সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন। একইভাবে, প্রতিযোগিতাহীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আইটি সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান আবার ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহক।

ঋণ-আমানতের অনুপাত বেশি হওয়ায় বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দিলেও এবি ব্যাংক ২০২৪ সালে ৯৮৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এছাড়া, নীতিমালা না থাকা সত্ত্বেও পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই কিছু কর্মকর্তার বিশেষ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে এবি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং পাঠানো মেসেজেরও কোনো উত্তর দেননি।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে