ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

জিয়াউল আহসানকে নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধানের চাঞ্চল্যকর দাবি

২০২৫ মার্চ ১৭ ১২:৫৬:৫২
জিয়াউল আহসানকে নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধানের চাঞ্চল্যকর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান নানা কারণে আলোচনায় উঠে আসেন এবং তার সম্পর্কে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। তাকে "ভয়ংকর ত্রাস" হিসেবে পরিচিত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ফোনে আড়ি পেতে কল রেকর্ড ফাঁস সহ নানা গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষত নারায়ণগঞ্জ সাত খুন মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং ২০১৩ সালের জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তিনি কারাবন্দি এবং তার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া চলছে।

সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভুঁইয়া (আইকেবি) তার ফেসবুক পেজে “বিজিবি, র‌্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার যত অভিজ্ঞতা” নামক ছয় পর্বের লেখায় জিয়াউল আহসান সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য প্রকাশ করেছেন। এতে জানা গেছে, জিয়াউল আহসান এর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং তার আচরণ নিয়ে নানা নতুন তথ্য উঠে এসেছে।

সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি জানান, জিয়াউল আহসান তাকে মারার হুমকি দিয়েছিলেন এবং তিনি তার এই আচরণ থেকে আতঙ্কিত ছিলেন। একবার সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে বোমা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল, যা জিয়াউল আহসান এর সাথে যুক্ত ছিল বলে জানা গেছে।

আইকেবি বলেছিলেন, তিনি ক্রসফায়ার (বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু জিয়াউল আহসান তা উপেক্ষা করে ক্রসফায়ার চালিয়ে যান। তার আচরণ সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তার উচ্ছৃঙ্খলতা বেড়ে যায়।

আইকেবি লিখেছেন, জিয়াউল আহসান কে বুঝানোর চেষ্টা করা হলেও তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এমনকি কিছু সেনা কর্মকর্তারা জানান, জিয়াউলের মস্তিষ্ক পাথর বা ইটের টুকরা দিয়ে ঠাসা, যার কারণে তাকে বোঝানো অসম্ভব।

জিয়াউল আহসান সেনাপ্রধানের নির্দেশ উপেক্ষা করতে শুরু করেন এবং তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, মিলিটারি সেক্রেটারি ও অ্যাসিস্টেন্ট মিলিটারি সেক্রেটারি এর মাধ্যমে সেনাপ্রধানের সিদ্ধান্তে চ্যালেঞ্জ করেন।

আইকেবি জানান, জিয়াউল আহসান সেনাবাহিনীতে যোগদান করে দ্রুত পদোন্নতি পান এবং র‌্যাব এর গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে হেফাজতের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।

জিয়াউল আহসান আইকেবি এর নির্দেশ উপেক্ষা করে ক্রসফায়ার চালিয়ে যেতেন এবং নতুন অফিসারদের হত্যার নির্দেশ দিতেন। যদিও দুই অফিসার তার নির্দেশ অস্বীকার করেন এবং মিলিটারি পুলিশ চেকপোস্টে চলে আসেন, পরে তাদের পুনর্বাসিত করা হয়।

আইকেবি আরও জানান, তিনি র‌্যাব, ডিজিএফআই এবং বিজিবি-এ নতুন অফিসার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং সেনাপ্রধান এর কাছে অনুরোধ করেছিলেন যাতে র‌্যাব ভেঙে দেওয়া হয়।

জিয়াউল আহসান তার বাড়িতে অস্ত্র রেখেছিলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন, এবং গার্ড নিয়োগ করেছিলেন—যা সেনাবাহিনীর নিয়মের বিরুদ্ধে ছিল। তাকে তার আচরণ সংশোধন করতে বলা হয়েছিল।

আইকেবি যখন জিয়াউল আহসান কে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন, তখন তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউল তা উপেক্ষা করে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন।

ইকবাল করিম ভুঁইয়া (আইকেবি) তার লেখায় জিয়াউল আহসান এর বিপজ্জনক এবং স্বৈরাচারী আচরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, অহংকার, সেনাবাহিনীর মধ্যে দুর্নীতি এবং অসামরিক কার্যকলাপের কারণে সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তবে তা কার্যকর হয়নি। জিয়াউল আহসান এর কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং বিতর্কিত হয়েছে।

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে