ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২০০ দিনের আমলনামা

২০২৫ মার্চ ১৭ ১২:২৮:১২
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২০০ দিনের আমলনামা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিগত ৫ আগস্ট, ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর, বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শুরু হয়। সরকারকে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম ২০০ দিনে নানা চ্যালেঞ্জ এবং সাফল্যের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

এই ২০০ দিনে, দেশটির অর্থনীতি ছিল সংকটময় অবস্থায়। বৈদেশিক রিজার্ভ একেবারে নিম্নমুখী ছিল, এমনকি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ ছিল না। তবে, প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের রেমিটেন্স পাঠিয়ে সরকারকে একটি আশ্রয় দিয়েছিল। এর ফলে, ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ বিলিয়ন ডলার বেশি ছিল।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২০০ দিনে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারে। এদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০.৬৪%। একই সময় ভারতীয় বন্দরের উপর নির্ভরতা কমিয়ে, বাংলাদেশ মালদ্বীপের মাধ্যমে পোশাক রপ্তানি করতে শুরু করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিদেশে পাচার হওয়া ২৩,৪০০ কোটি ডলার ফেরত আনার উদ্যোগ। সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ডক্টর সালেহ আহমেদ জানিয়েছেন, একটি বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আইনি কাঠামো শক্তিশালী করতে সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করছে। এর পাশাপাশি, শেখ হাসিনা পরিবারের সন্দেহভাজন ৬১৪ কোটি টাকা জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট।

২০০ দিনের মাথায়, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং দেশের অর্থনীতি সামষ্টিকভাবে স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। তবে, শিশু ধর্ষণসহ কিছু সামাজিক অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। সরকারের কাছে এর সমাধান চাওয়া হচ্ছে এবং আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার সম্পন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চীন এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সাফল্য এসেছে, এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, বাংলাদেশে এক নতুন রাজনৈতিক শুরুর পথে রয়েছে। সরকারের সংস্কারের উদ্যোগের সাথে সাথে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধতা এবং জাতীয় স্বার্থে কাজ করার ব্যাপারে বিশ্লেষকদের একমত।

এদিকে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নতুন আলো দেখাচ্ছে, জাতিসংঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের পর, এবং গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ সফর করেছেন।

এছাড়া, বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং উন্নতি ঘটেছে।

সব মিলিয়ে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ২০০ দিনে নানা চ্যালেঞ্জ এবং সাফল্যের পাশাপাশি কিছু বিষয় রয়েছে যেখানে আরও কাজ করা প্রয়োজন। তবে সরকারের দৃঢ় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী ভাবনা তৈরি করেছে।

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে