ঢাকা, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

হাসিনা সরকার উৎখাতের পেছনের কারণ: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২১ ১৯:৪৭:৪১
হাসিনা সরকার উৎখাতের পেছনের কারণ: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘের অধিকার অফিস (OHCHR) ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের ঘটনাবলী নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঐ সময়কালের আন্দোলন এবং সহিংসতার ফলে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত হয়েছিল। প্রতিবেদনটি জানায়, গণঅভ্যুত্থানের শেষ দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় আন্দোলন পুনরায় উস্কে উঠেছিল এবং সরকার পতনের দিকে চলে যায়।

কোটা আন্দোলন ও সরকারের প্রতিক্রিয়া: ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান, তবে তার ভাষণ বিক্ষোভকারীদের কাছে আন্তরিকতাহীন বলে মনে হয়। এর আগে, ১৬ জুলাই সরকার কোটা সংক্রান্ত শিক্ষার্থীদের দাবির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আপিল দাখিল করেছিল, যা বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল।

বিক্ষোভের সূচনা: কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশজুড়ে "কমপ্লিট শাটডাউন" কর্মসূচি ঘোষণা করে, যেখানে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়, তবে হাসপাতাল এবং জরুরি পরিষেবাগুলি চালু রাখা হবে। এর সাথে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীও সমর্থন জানায়।

আন্দোলনে সহিংসতা: বিক্ষোভের মাঝে সামরিক বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব সহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী জনগণের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনী প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগে জড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কিছু স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটে।

দেশব্যাপী কারফিউ এবং সেনাবাহিনীর মোতায়েন: ১৮ জুলাই থেকে, বিক্ষোভকারীরা বড় বড় সড়ক অবরোধ করতে শুরু করলে, সরকার মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করে এবং সেনাবাহিনী, পুলিশসহ ২৭,০০০ সেনাসদস্য মোতায়েন করে। বিশেষ অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন সড়কে কৌশলগতভাবে গুলি চালায়।

সরকারের কঠোর পদক্ষেপ: ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট কোটা পরিবর্তন নিয়ে রায় দেয়, যার পরে সরকার দ্রুত সেই রায় মেনে নেয় এবং সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ করে। তবে ছাত্র আন্দোলন তখনই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ বেশ কিছু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার পদত্যাগ এবং পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার জন্য দায়ী করার দাবি জানিয়েছিল।

আন্দোলন এবং জাতীয় ঐক্য: ২৬ জুলাই বিএনপি, অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে জাতীয় ঐক্য গঠনের আহ্বান জানায় এবং সরকারের পতন দাবি করে। পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী গণগ্রেপ্তার অভিযান চালায় এবং ছাত্রনেতাদের আটক করা হয়।

সেনাবাহিনীর সমর্থন হ্রাস: ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি বড় সেনা সভায় জানিয়েছেন যে, জুনিয়র কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালাতে চান না। এরপরই সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমর্থন হ্রাস পেতে শুরু করে।

শেখ হাসিনার দেশত্যাগ: ৫ আগস্ট, লাখ লাখ বিক্ষোভকারী ঢাকার দিকে অগ্রসর হলে, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা গুলি চালায়, তবে সেনাবাহিনী ও বিজিবি বেশিরভাগ সময় বিক্ষোভকারীদের চলাচলে বাধা দেয়নি। ২ আগস্ট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে চড়ে দেশ ছাড়েন, যা সরকার পতনের একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

তপন/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে