ঢাকা, রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

কেয়ারটেকার থেকে এমপি, শত কোটি টাকার মালিক গিনি

২০২৪ সেপ্টেম্বর ৩০ ১০:২৫:১৮
কেয়ারটেকার থেকে এমপি, শত কোটি টাকার মালিক গিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি। যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন। সেখান থেকে হয়ে জান শেখ হাসিনার আত্মীয়। আস্থা অর্জন করেন শেখ হাসিনার। যার আস্থায় পেয়ে যান জাতীয় সংসদের টিকিটও। হয়ে যান সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ। হয়ে যান শত শত কোটি টাকার মালিক।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে গাইবান্ধা-২ সদর আসন থেকে নির্বাচন করেন মাহবুব আরা বেগম গিনি। এমপি নির্বাচিত হয়ে নিজেকে সৎ নির্ভীক দেখিয়ে ভাতিজা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব রাজিব ও মৃদুল মোস্তাফি ঝন্টুকে সঙ্গে নেন। গিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকা থাকলেও তার হয়ে কাজ করতেন ভাতিজা ও ঝন্টু। ঝন্টু গিনির হ্যান্ডব্যাগ বহন করলেও রাজিবকে দায়িত্ব দেন বিভিন্ন অফিসের কাজ ভাগাভাগি করার জন্য। তার বদৌলতে বেকার রাজিব বনে যান বড় ব্যবসায়ী হিসেবে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল মেরামত, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, মুজিব শতবর্ষের বিশেষ প্রকল্পের কাজ তালিকা করা ও ভাগাভাগির দায়িত্বে ছিলেন ব্যাগ ঝন্টু। ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প কাজ পত্রে সম্পাদন দেখানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পিআইও ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারা করতেন এই ঝন্টু।

অভিযোগ রয়েছে ১৫ বছরে মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট ও স্কুল-মাদ্রাসার উন্নয়নের অন্তত সহস্রাধিক প্রকল্প থেকে মৃদুল মোস্তাফি ঝন্টুর মাধ্যমে মাহবুব আরা বেগম গিনি নিয়েছেন অন্তত শতকোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এতিমখানা ও গাইবান্ধা হাসপাতালের রোগীদের খাবার থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা, জেলখানার বন্দিদের খাবারের টাকা থেকে মোটা অংকের টাকা দিতে হতো ঝন্টুর মাধ্যমে। সে কারণে এসব পরিদর্শন টিমের সদস্য নির্বাচিত করে দেওয়া হয় ঝন্টুকে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৩ সাল থেকে দপ্তরি-কাম-নৈশপ্রহরীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগে এমপিদের বাদ দিয়ে কোনো কিছু হতো না। সে কারণে প্রতিটি পদের বিপরীতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করে নেওয়া হয় প্রার্থীদের কাছে। এতে প্রায় ২২১টি বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীদের কাছ থেকে ঘুস নেওয়া হয় ১ কোটি টাকারও বেশি। আর এই টাকা যেত যুবলীগ নেতা ও ভাতিজা রাজিব ও ঝন্টুর হাত দিয়ে এমপির হাতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রকৌশলী জানান, রাজিব ১৫ বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো— গাইবান্ধা থেকে সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ। কাজটি বগুড়ার ঠিকাদারের নামে নিয়ে তাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। এমপি গিনি নিজে কখনো টাকা পয়সার ধারেকাছেও যেতেন না। স্কুল-কলেজের নিয়োগ হলেই তাকে দিতে হতো মোটা অংকের টাকা। এভাবে লুটপাট করে এমপির ভাতিজা আহসান হাবীব রাজিব ও ব্যাগ ঝন্টুও আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। টাকার পাহাড় গড়েছেন। কোটি কোটি টাকা দিয়ে গাইবান্ধা শহরের থানাপাড়ায় বানিয়েছেন ৫ তলা বিদেশি পাথরের রাজপ্রাসাদ। কিনেছেন জায়গা জমি। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে কোটি কোটি টাকার জায়গা কিনে বহুতল শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করছেন।

জুলাই সংস্কার আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ জনতা এমপি গিনি, ভাতিজা রাজিবের রাজপ্রসাদ তুল্যবাড়ি ভাঙচুর করেন। তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলা করা হয়েছে।

এস/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে