ঢাকা, শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

চার দেশের ৬ শহরে বাড়ি অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমারের

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৬ ২৩:২৮:৪৭
চার দেশের ৬ শহরে বাড়ি অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমারের

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের অন্যতম প্রভাবশালী কর্মকর্তা প্রলয় কুমার জোয়ারদার। সর্বশেষ তিনি অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রলয় কুমার জোয়ারদারের অপকর্মের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পায়নি কেউ। নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪-৫’শ জনকে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দিয়ে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আছে।

তবে তার বাবার দাবি বিনা টাকায় চাকরি দিয়েছেন তার ছেলে। প্রলয় কুমার জোরদার উপজেলার বারহাট্রা সদর ইউনিয়নের ঝিতন গ্রামের উপেন্দ্র জোরদারের ছেলে।

প্রলয় কুমার জোরদার এর বাবা উপেন্দ্র জোয়ারদার বলেন, আমার ছেলে বারহাট্টাসহ জেলায় প্রায় ৪-৫ শত মানুষের চাকরি দিয়েছে বিনা টাকায়। এজন্য মানুষ তাকে অনেক ভালোবাসে। পুত্রবধূ মারা যাওয়ার পর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে ৫-৭ হাজার লোক এসেছে। এটা সব মানুষের ভালোবাসার প্রতিফলন।

প্রলয় কুমার জোরদার প্রথমে এনএসআইয়ে চাকরি করেছেন। পরে চাকরি বিধি লঙ্ঘন করার কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে তথ্য গোপন করে ২৪তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগদান করেন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন। তাকে প্রধানমন্ত্রীর প্রোটোকল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রটোকল অফিসার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে শুরু হয় তার ক্ষমতার আধিপত্য, চাকরি বাণিজ্য।

সেই সুবাদে প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিজিবি, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, এনএসআই, ডিসি অফিস, জজ কোর্ট এবং স্থানীয় স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি বাণিজ্য শুরু করেন।

কয়েক বছরে তিনি কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেন। এসব চাকরি বাণিজ্য বিষয়টি হ্যান্ডেল করতেন তার ছোট ভাই শ্যামল জোয়ারদার। প্রধানমন্ত্রী প্রটোকল অফিসার হওয়ার পর তিনি তার চাচা শ্বশুর স্বপন ভট্টাচার্যকে সংসদ নির্বাচনে যশোর-৫ মনিরামপুর আসন থেকে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত করেন।

শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে যখন পুনরায় নির্বাচিত হন তখন স্বপন ভট্টাচার্যকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করেন। তিনি মন্ত্রী হওয়ার পেছনেও সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন প্রলয় কুমার জোয়ারদার।

প্রলয় কুমার ২০২৪ সালের নির্বাচনে যশোর জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পান। ওই সময় যশোর জেলার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে ও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে প্রলয় কুমারের বদলির আবেদন করেন।

কিন্তু অনেক দৌড়ঝাপের পরও প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে তারা সরাতে পারেননি। এমনকি প্রলয় কুমার নির্বাচনের আগে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি হন। কিন্তু অতিরিক্ত ডিআইজি পদে যোগ না দিয়ে যশোর জেলা পুলিশ সুপার থেকেই নির্বাচন শেষ করেন। এরপর পদোন্নতি পাওয়া পদে যোগ দেন।

প্রলয় কুমার জোয়ারদার এলাকায় পরিপাটি একটা বাড়ি ও সামান্য সম্পদ করলেও ঢাকার উত্তরায় সাততলা বাড়িসহ একাধিক ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশে বাড়ি এবং সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। এর মধ্যে ভারতের কলকাতা, চেন্নাই ও দিল্লিতে বাড়ি করেছেন।

প্রভাবশালী এ কর্মকতার এক নিকট আত্মীয় জানান, তিনি দিল্লিতে ডেভেলপার ব্যবসাও করেছেন। বাড়ি করেছেন সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে ও আমেরিকায়। বিশেষ করে যেখানেই স্ত্রীর চিকিৎসা করেছেন সেখানেই তিনি বাড়ি করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ছাত্র জনতাকে দমন করার জন্য অন্যতম পরিকল্পনাকারীও ছিলেন তিনি। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ কর্মকর্তা অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকে তারও কোনো হদিস নেই। প্রলয় কুমার জোরদারের সাথে তার পরিবারের কারো কোন যোগাযোগ নেই বলে জানান তার বাবা।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে