ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

পূর্বাচল কূটনৈতিক জোনে হাসিনা পরিবারের ৬০ কাঠার প্লট

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৫ ০৬:২৩:৪৫
পূর্বাচল কূটনৈতিক জোনে হাসিনা পরিবারের ৬০ কাঠার প্লট

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল,বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের আলোচিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কূটনৈতিক জোনে প্রত্যেকে ১০ কাঠা আয়তনের প্লট নিয়েছেন।

সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে রাজনৈতিক বিশেষ বিবেচনায় তাদের প্লট দেওয়া হয়। ২০২২ সালে তারা প্লট বুঝে পান। পরে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয় বিষয় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া খোদ রাজউকেরই অনেকে এই বিষয়ে কিছু জানেন না।

রাজউকের একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর প্লট বরাদ্দের সব ফাইল রেকর্ড শাখা থেকে সরিয়ে অন্যত্র লুকিয়ে ফেলা হয়। পরে চেয়ারম্যানের ড্রয়ারে ফাইল রয়েছে এমন খবরে রাজউকে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দেয়।

সম্প্রতি রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির মুখে এই সংক্রান্ত ৬টি ফাইল পুনরায় রেকর্ডরুমে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে চুরি বা নথি হারানোর শঙ্কায় সবকটি ফাইল বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

শেখ হাসিনার প্লট : শেখ হাসিনা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নিজেকে অসহায় এবং নিঃস্ব বলে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ তার নিজের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোন ২৭ নম্বর সেক্টরে ২০৩ নম্বর রোডে তার প্লট নম্বর ০০৯। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট তার নামে বরাদ্দপত্র ইস্যু করে রাজউক। শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির ৫৪ সুধা সদনের ঠিকানায় বরাদ্দপত্র পাঠানো হয়।

রাজউকের রেকর্ডরুমে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ফাইলগুলো বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনার প্লট বরাদ্দের ফাইলের ওপর বড় ইংরেজি হরফে লেখা রয়েছে ভি-৩, পাতা ১৪১।

ওই ফাইলে শেখ হাসিনার স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনত্রের কপি, বরাদ্দপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে। রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত বরাদ্দপত্রে লেখা হয় ‘কাঠা প্রতি ৩ লাখ টাকা হিসাবে ১০ কাঠার প্লটের মোট মূল্য ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো।’

শেখ হাসিনা ছাড়াও ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তাদের প্লট নম্বর যথাক্রমে ০১৫ এবং ০১৭। এর মধ্যে জয়ের নামে প্লটের বরাদ্দপত্র জারি করা হয় ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর। পরে ১০ নভেম্বর প্লটের মালিকানাসংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এর আগে ২ নভেম্বর পুতুলের নামেও ১০ কাঠা প্লটের বরাদ্দপত্র ইস্যু করা হয়। এতে এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার তৎকালীন উপপরিচালক হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।

কেবল শেখ হাসিনা ও তার ছেলেমেয়ে নন; পূর্বাচল প্লকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছেলেমেয়ে। তাদের নামেও যথারীতি প্লট বরাদ্দ করা হয় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের একই জায়গায়। সেখানে শেখ রেহানার প্লট নম্বর ০১৩, তার ছেলে রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১১ ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকীর প্লট নম্বর ০১৯।

পূর্বাচল কূটনৈতিক এলাকায় মনোরম লোকেশনে বিশাল জায়গা উঁচু সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা শেখ হাসিনা পরিবারের ৬ জনের ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার প্লট। ভেতরে নারিকেল, সুপারি, আম ও জামসহ বিভিন্ন গাছ রোপণ করা হয়েছে। একদিকে বিভিন্ন ধরনের শাক ও সবজি চাষ করা হচ্ছে। প্লটের তিন দিকেই রাস্তা। পেছন দিকে প্রবহমান গঙ্গুর নদী।

শেখ হাসিনা পরিবারের এসব প্লট একত্রিত করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হয় রাজউকের প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে। পরে দুপাশে দুটি লোহার গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। এখানে আগে একাধিক নিরাপত্তারক্ষী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতেন। তবে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৫ আগস্ট রাতে এখানে হামলা চালায়। এই সময় তারা লোহার গেট খুলে নিয়ে যায়।

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের সময় রাজউকের চেয়ারম্যান ছিলেন আনিসুর রহমান। সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তা হিসাবে তিনি চাকরি শেষে একদফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে চেয়ারম্যানে পদে বহাল ছিলেন। এছাড়া রাজউকের তৎকালীন স্টেট ও ভূমি শাখার পরিচালক (পরে সদস্য) নুরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয় সর্বোচ্চ গোপনীয়তায়।

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ খুব গোপনে সম্পন্ন করা হয়। যে কারণে বাইরের কেউ এই বিষয়ে তেমন কিছুই জানতে পারেননি। খোদ সরকারপ্রধানের নামে প্লট বরাদ্দের ঘটনা জানাজানি হলে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির শঙ্কা ছিল। এই কারণে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয় বিষয় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। রাজউকের সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা ছাড়া এই বিষয়ে অন্য কেউ তেমন কিছুই টের পাননি। এমনকি সরকার পতনের পরও এই সংক্রান্ত নথি তড়িঘড়ি লুকিয়ে ফেলা হয়। এই নিয়ে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে