ঢাকা, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য ঋণের পথে বাংলাদেশ

২০২৪ মে ২৮ ১২:১৫:২৮
রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য ঋণের পথে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ‘বিল্ডিং কমোনিটি রেজিলেন্স অ্যান্ড সেলফ রিলাইয়েন্স’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের মৌলিক সেবা ও সুবিধা বাড়ানো হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৭৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই টাকা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ এবং অনুদান হিসেবে নেয়া হবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কক্সবাজার জেলায় অনুপ্রবেশ করায় ওই এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং স্থানীয় শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা তৈরির মাধ্যমে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ওই এলাকার মানুষের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

অন্যদিকে, হোস্ট কমিউনিটি ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচ্য প্রকল্পটি গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, শুধু এই প্রকল্প নয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিচ্ছে সরকার।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ওইসব এলাকার অবকাঠামো এবং জীবনমান উন্নয়নে এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে ৭০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। যার মধ্যে ৩১৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান ও ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার নেওয়া হবে ঋণ হিসেবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ ২৮ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য প্রকল্পগুলো উপস্থাপন করা হবে। এতে সভাপত্বি করবেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা যায়, একনেকে অনুমোদন পেলে এ সপ্তাহেই প্রকল্পগুলো বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় উঠবে। এ কারণে তাড়াহুড়া করে প্রকল্পগুলো অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য এত বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

তাদের মতে, অনুদান দেওয়ার নামে মূলত ওই এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হচ্ছে তা রোহিঙ্গা না থাকলে ওই এলাকায় বর্তমানে প্রয়োজন ছিল না। ডলার সংকটের এই সময়ে সরকারের দুর্বলতা বুঝে অনুদানের নামে ঋণ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ এর আগে কখনো রোহিঙ্গাদের জন্য ঋণ নেয়নি সরকার।

২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা এ দেশে আসার পর এটি হবে কোনো উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বাংলাদেশের বড় আকারের ঋণ নেওয়ার ঘটনা। এতদিন সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে শুধু বিদেশি অনুদান গ্রহণ করেছে।

জানা গেছে, এই ৭০ কোটি ডলার ঋণ ও অনুদান দিতে সরাসরি ইআরডি বা পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে তাড়াহুাড়া করে প্রকল্পগুলো অনুমোদন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ৬টি প্রকল্পের বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের পরিমাণ ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ ১৯২ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার ও অনুদানের পরিমাণ ১৫৭ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার।

এ ছাড়া ভৌত অবকাঠামো বিভাগের চারটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় লোকজনের জন্য রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, বনায়ন, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ। এ খাতেও ব্যয় হবে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার।

প্রকল্পগুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলায় আশ্রয় নেওয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের এবং বাংলাদেশিদের বিভিন্ন মৌলিক দুর্যোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।

এ ছাড়া প্রকল্পের উল্লিখিত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রকল্প এলাকায় উপযুক্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন ও সংস্কারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভৌত সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে সরকারি সেবা দেওয়ার জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ করা হবে।

শেয়ারনিউজ, ২৮ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে