ঢাকা, শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

বিসিএসে পিছিয়ে নারীরা, ১০০ পদের ৭৫ জনই পুরুষ

২০২৪ মে ১১ ০৬:৫৯:৫০
বিসিএসে পিছিয়ে নারীরা, ১০০ পদের ৭৫ জনই পুরুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন নারীরা। আগের পাঁচ বিসিএসে নারীদের নিয়োগের হার ছিল এক-চতুর্থাংশ, অর্থাৎ ২৫-২৬ শতাংশের ঘরে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে তা নেমেছে ২০ শতাংশেরও নিচে। সর্বশেষ ৬টি সাধারণ বিসিএসের গড় হিসাবে প্রতি ১০০ ক্যাডার পদের ৭৫টিতেই নিয়োগ পেয়েছেন পুরুষরা। নারীদের ক্যাডার পদে নিয়োগের হার মাত্র ২৫ শতাংশ।

অথচ দেশের উচ্চশিক্ষায় ছাত্র ও ছাত্রীদের সংখ্যা প্রায় সমান। অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলেও এগিয়ে ছাত্রীরাই। এমন প্রেক্ষাপটে উচ্চশিক্ষা শেষে ছাত্রীদের চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

পিএসসি কর্মকর্তাদের অভিমত অবশ্য ভিন্ন। তারা বলছেন, অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় নারী শিক্ষার্থীরা ভালো করলেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নানান কারণে তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বৈশ্বিক চিত্র একই। এছাড়া নারী কোটা বাতিলের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও সর্বশেষ বিসিএসে পড়তে পারে বলে ধারণা তাদের।

প্রকাশিত ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২ হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ৪২১ জন। বাকি এক হাজার ৭৪২ জনই পুরুষ। শতাংশের হিসাবে নারীদের এই বিসিএসে নিয়োগের হার মাত্র ১৯.৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে পুরুষের নিয়োগের হার ৮০.৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ, এই বিসিএসে ক্যাডার পদে নিয়োগ পওয়া প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৮১ জনই পুরুষ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে ৩৬তম বিসিএসে ২ হাজার ৩২৩ জনকে চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। এরমধ্যে নারী ক্যাডার ছিলেন ৬০৯ জন, যা মোট নিয়োগপ্রাপ্তদের ২৬.২২ শতাংশ। বাকি ৭৩.৭৮ শতাংশই পুরুষ প্রার্থী। পরের বছর ৩৭তম বিসিএসে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয় এক হাজার ৩১৪ জনকে। তাদের মধ্যে মাত্র ৩২৩ জন নারী, শতাংশের হিসাবে যা ২৪.৬০ শতাংশ।

২০২০ সালে ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে ২ হাজার ২০৪ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। এরমধ্যে নারী প্রার্থী ছিলেন ৫৯৩ জন, শতাংশের হিসাবে যা ২৬.৯১ শতাংশ। ৪০তম বিসিএসে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া এক হাজার ৯৬৩ জনের মধ্যে নারী ৫১১ জন। এছাড়া এক হাজার ৪৫২ জন পুরুষ।

৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশ হয় ২০২৩ সালে। এতে সুপারিশপ্রাপ্ত হন ২ হাজার ৫১৬ জন। তাদের মধ্যে ৬৭২ জন নারী এবং এক হাজার ৮৪৪ জন পুরুষ। শতাংশের হিসাবে নারী ২৬.৭১ এবং পুরুষ ৭৩.২৯ শতাংশ।

৬ বিসিএসে গড়ে ১০০ ক্যাডারে ৭৫ জনই পুরুষ ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছয়টি সাধারণ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো— ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএস। এতে মোট নিয়োগ পেয়েছেন ১২ হাজার ৪৮৩ জন, যার মধ্যে নারী ৩ হাজার ১২৯ জন। বাকি ৯ হাজার ৩৫৪ জনই পুরুষ।

ছয়টি বিসিএসে ৭১৬১ নারী কর্মকর্তা নিয়োগপিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয়টি সাধারণ বিসিএসে ক্যাডার পদে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে নারী ২৫.০৬ শতাংশ। বাকি প্রায় ৭৫ শতাংশই পুরুষ। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ ক্যাডারের ৭৫ জন পুরুষ এবং নারী ২৫ জন।

উচ্চশিক্ষায় ছাত্রীদের উপস্থিতি কেমন?দেশে উচ্চশিক্ষায় এগিয়েছেন নারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রীর পার্থক্য কমে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায়ও ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে ছাত্রীরা। এমনকি বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায়ও ছাত্রীদের ফলাফল ভালো।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৬৩টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায় ও তাদের অধীন প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার। এরমধ্যে ছাত্র ২৫ লাখ ৪২ হাজার এবং ছাত্রী ২২ লাখ ১৪ হাজার। সে হিসাবে মোট শিক্ষার্থীর ৪৮ শতাংশ ছাত্রী এবং ৫২ শতাংশ ছাত্র।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফলে প্রথম পাঁচজনের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রী। তারা পড়াশোনায় মনোযোগী ও ভালো ক্যারিয়ার গড়ার প্রত্যাশী। বিভাগের শিক্ষকরাও জানান, ছাত্রীদের আগ্রহের কারণে বিসিএসসহ চাকরির পরীক্ষায় তাদের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি।

বিসিএসসহ দেশে বিদ্যামান অধিকাংশ চাকরির পরীক্ষার বিষয়বস্তু অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার সঙ্গে মিল নেই। একজন গ্র্যাজুয়েট যে বিষয়েই পড়ুক না কেন, দিনশেষে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞানের একই প্রশ্নে সবাইকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এতে অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় ভালো করা শিক্ষার্থীরাও চাকরির পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছেন।

বিসিএসে নারীরা পিছিয়ে কেন?

সরকার নারীর ক্ষমতায়নে জোর দিচ্ছে। পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ পাচ্ছেন নারীরা। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নারীদের বিসিএসে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিয়ে ও সংসারের চাপ সামলে পড়াশোনা করতে না পারার কথা জানিয়েছেন অনেকে। অবার অনেকে চেষ্টা করেও নানান কারণে শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারছেন না।

চাকরির পরীক্ষায় ‘গলদে’ পিছিয়ে নারীরা!

বিসিএসসহ দেশে বিদ্যামান অধিকাংশ চাকরির পরীক্ষার বিষয়বস্তু অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার সঙ্গে মিল নেই। একজন গ্র্যাজুয়েট যে বিষয়েই পড়ুক না কেন, দিনশেষে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞানের একই প্রশ্নে সবাইকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এতে অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় ভালো করা শিক্ষার্থীরাও চাকরির পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছেন। এই প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন না আনলে শুধু নারী নন, উচ্চশিক্ষায় ভালো করা অধিকাংশ শিক্ষার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

নারী ক্যাডার কমার নেপথ্যে কোটা বাতিল?

সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন ১০ শতাংশ নারী কোটা ছিল। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সরকার কোটা পদ্ধতি বাতিল করে। এতে বিসিএসেও নারী কোটা বাতিল হয়। ৩৮তম বিসিএসে সর্বশেষ নারী কোটা বহাল ছিল। ৩৯তম বিসিএস ছিল ‘বিশেষ বিসিএস (স্বাস্থ্য)’।

৪০ ও ৪১তম বিসিএসে নারী কোটা না থাকলেও নারী প্রার্থীদের নিয়োগ পাওয়ার হার ছিল ২৬ শতাংশের ঘরে। তখন বলা হয়েছিল কোটা বাতিল হলেও নারী ক্যাডার কমেনি। ৪২তম বিসিএসও ছিল বিশেষ। সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে ব্যাপক হারে নারী ক্যাডার কমেছে। পিএসসির কর্মকর্তারা অবশ্য এখন বলছেন বিসিএসে নারীদের আরও পিছিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে নারী কোটা বাতিলের একটা প্রভাবও রয়েছে।

বিশেষ বিসিএসে নারী বেশি

সাধারণ বিসিএসে নারী ক্যাডার কম হলেও বিশেষ বিসিএসে তাদের নিয়োগ পাওয়ার হার তুলনামূলক বেশি। পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনে সর্বশেষ ৩৯ ও ৪২তম বিসিএসের যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, তা থেকে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই দুটি বিসিএসে শুধুমাত্র চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

৩৯তম বিশেষ বিসিএসে মোট ৬ হাজার ৭৯২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ১৯২ জনই নারী। বাকি ৩ হাজার ৬০০ জন পুরুষ। শতাংশের হিসাবে ৪৭ শতাংশ নারী এবং ৫৩ শতাংশ পুরুষ।

৪২তম বিশেষ বিসিএসে অবশ্য নারী ক্যাডার আরও বেড়েছে। এ বিসিএসে ৪ হাজার ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে নারী এক হাজার ৯৬১ জন এবং পুরুষ ২ হাজার ৩৯ জন। সে হিসাবে ৪৯.শূন্য ২ শতাংশই নারী এবং ৫০.৯৮ শতাংশ পুরুষ।

শেয়ারনিউজ, ১১ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে