ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

সৌদি আরবে সাতক্ষীরার নারীকে 'পতিতা'র মতো ব্যবহার

২০২৪ মে ০৩ ১৫:৪১:০৮
সৌদি আরবে সাতক্ষীরার নারীকে 'পতিতা'র মতো ব্যবহার

প্রবাস ডেস্ক : উচ্চ বেতনে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের এক নারীকে সৌদি আরবে পাচার করা হয়েছে। সেখানে তাকে গোপন আস্তানায় রাখা হয় এবং যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাকে ভারী গৃহস্থালির কাজ করানো হলেও মজুরি রেখে দেয় পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। এমনকি তাকে ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হয় না।

গত মাসে এক হোয়াটসঅ্যাপ ‘ভয়েস কলে’ নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন ওই নারী। ভুক্তভোগী ওই নারির নারীর নাম রোজিনা খাতুন (৩৪)।

রোজিনা খাতুন (৩৪) নামে এই নারী ঢাকাস্থ মতিঝিলের সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেসের মাধ্যমে গত ১৯ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে স্থানীয় পাচারচক্রের কাছে বিক্রি করা হয় তাকে।

গত ১৬ এপ্রিল হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগে পর ভুক্তোভোগী নারীর ভাই সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর শ্যামনগর থানায় মানব পাচারের একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় উপজেলার শংকরকাটি গ্রামের মোমিন খাঁর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল (২৮), তাঁর মা তাসলিমা বেগম (৪৭) ও সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেসের ম্যানেজার মো. রাসেল আকন শিমুলের (৩৩) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা দুই/তিনজনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে। এরই মধ্যে চঞ্চলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শ্যামনগর থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানবপাচারের অভিযোগে ভুক্তোভোগী নারীর ভাই মামলা করেছেন। আসামিদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’

পাচারের শিকার রোজিনার ভাই সালাউদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছয় মাস আগে তার বোনের বিবাহবিচ্ছেদ হলে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তখন এলাকা পূর্বপরিচিত তাসলিমা ও তার ছেলে মোস্তাফিজুর তার বোনকে সৌদি আরবে চাকরির প্রস্তাব দেয়। রোজিনা পাসপোর্ট তৈরির পর ১৭ মার্চ তাদের সাথে ঢাকায় চলে যায়।

তিনি আরো বলেন, সৌদি আরব যাওয়ার পর রোজিনার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করতে না হয়নি। তবে সে ভাল জায়গায় কাজ করছে বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। তবে হঠাৎ করে গত ১৬ এপ্রিল দুপুর ২টা ৪৬ মিনিটে তার হোয়াটসঅ্যাপে ‘ভয়েস কল’ পাঠিয়ে রোজিনা নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানায়।

‘কান্নাজাড়িত কন্ঠে সে বলে, সৌদিতে পৌঁছানোর পরই তার ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। অসুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ে গেলেও সেগুলোও ছিনিয়ে নেয় তাঁরা।

রোজিনা আরো বলে, চিকিৎসা করাতে না পেরে ক্রমেই শরীরের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে যৌনদাসী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে গৃহস্থালির ভারী কাজ করানো হয়। কিন্তু পারিশ্রমিকের অর্থ পাচার চক্রের সদস্যরা রেখে দেয়।’

ভুক্তোভোগী বোনের বরাত দিয়ে সালাউদ্দীন আরো বলেন, কাজে যেতে রাজি না হলে কিংবা দেশে ফিরতে চাইলে তাকে মারপিট করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাথরুমের পানি খেতে দেয়া হচ্ছে। তাকে ঠিকমত খাইতে দেয়া হয় না। পেটে ক্ষুধা নিয়ে সে কাজ করতে না পারলে তার উপর চরম অত্যাচার করা হয়। দ্রুত উদ্ধার করা না হলে মারা যাওয়ার শংকার কথা জানিয়েছে রোজিনা।

তিনি আরও বলেন, রাসেল আকন, তাসলিমা ও মোস্তাফিজুরসহ আর অপরিচিত দুই/তিন জন এই মানব পাচার চক্রের সাথে জড়িত। তারা মতিঝিলের সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস গ্রামের সহজ সরল, অভাবী এবং ডিভোর্সি নারীদের টার্গেট করে বলেও রোজিনা জানিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে বলেন, রোজিনার দুরাবস্থার কথা জানতে পেরে তিনি লাইসেন্স মালিক শিমুলের সাথে কথা বলেছেন।

তবে রোজিনাকে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে তিনি দুই লাখ টাকা দাবি করেছেন। বাধ্য হয়ে অন্য লাইসেন্স মালিককে দিয়ে তিনি বিষয়টি নিরসনের চেষ্টা করছেন।

রোজিনার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার শিমুল।

তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।’

শেয়ারনিউজ, ০৩ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে