ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ইউএই-যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, কমেছে সৌদি আরব-যুক্তরাষ্ট্র থেকে

২০২৪ এপ্রিল ২১ ১৭:৪৩:৫৭
ইউএই-যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, কমেছে সৌদি আরব-যুক্তরাষ্ট্র থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশ থেকে রেমিট্যান্স আয়ে বড় উল্লম্ফনের সুবাদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আসা কমেছে। প্রবাসীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩.২৭ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.২০ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ বা ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

এর সুবাদে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসা দেশের তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত গত অর্থবছরের তৃতীয় স্থান থেকে চলতি অর্থবছরে প্রথম স্থানে চলে এসেছে।

আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে পাচার করা অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭.০৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬.০৩ বিলিয়ন ডলার।

স্বাভাবিক সময়ে আরব্ব আমিরাত থেকে মাসে ২৫০-৩০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পায় বাংলাদেশ। তবে নভেম্বর থেকে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আসা বাড়তে থাকে।

গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে আরব আমিরাত থেকে প্রতি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে গড়ে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, মার্চ মাসেও ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশটি থেকে।

একই প্রবণতা দেখা গেছে যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স আয়েও। বেশি রেমিট্যান্স আসা দেশের তালিকার চতুর্থ অবস্থান থেকে দেশটি উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২.১৪ বিলিয়ন ডলার; আগের অর্থবছরের ১.৪৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় যা ৪৬ শতাংশ বেশি।

সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। এর বাইরে মালয়েশিয়া, ওমান, ইতালি, জার্মানি ও বাহরাইন থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

রেমিট্যান্স নিয়ে এক দশকের বেশি সময় কাজ করছেন, এমন একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকার আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার পেছনে পাচার করা অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, হুট করে উপসাগরীয় দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ গত কয়েক বছরে দেশটিতে খুব বেশি নতুন শ্রমিক যাননি। সর্বশেষ তিন বছরে মাত্র ২.২৯ লাখ শ্রমিক গেছেন আরব আমিরাতে।

ওই ব্যাংকার বলেন, শ্রমিকের আয় থেকে যদি রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হতো, তাহলে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা সৌদি আরব থেকে আসা রেমিট্যান্সের। কারণ দেশটিতে শ্রমিক গেছে আরব আমিরাতের চেয়ে প্রায় সাতগুণ বেশি। 'সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স উল্টো কমে যাচ্ছে।'

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে অনেক রেমিটার আছেন যারা কয়েক প্রজন্ম ধরে সেখানে বাস করছেন। এছাড়া গত কয়েক বছরে অনেকে শিক্ষার্থী হিসেবে দেশটিতে গেছেন।

এর বাইরে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু বিনিয়োগ যুক্তরাজ্যে যাওয়ার কারণেও দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আসা বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা।

অন্যদিকে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয়ে প্রথম স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রেমিট্যান্স আয় আসা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩১ শতাংশ কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১.৯৪ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৮০ বিলিয়ন ডলার। ফলে শীর্ষ রেমিট্যান্সের উৎস দেশের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে নেমে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।

২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৬৫ লাখেরও বেশি মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ বা ১৫.৬৭ লাখ কর্মীই গেছেন সৌদি আরবে। সে হিসাবে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আয় বাড়ার কথা।

কিন্তু সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ গত দুই বছর ধরে কমছে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের উৎস হিসেবে প্রথম স্থানে থাকা সৌদি আরব গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শীর্ষস্থান হারিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে গিয়েছিল।

চলতি অর্থবছরে সৌদি আরবের অবস্থান আরও এক ধাপ নেমেছে। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার; গত অর্থবছরের একই সময় শেষে যা ছিল ২.৭৬ বিলিয়ন ডলার। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আসা কমেছে প্রায় ২৯ শতাংশ।

এর বাইরে কুয়েত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার ও জাপান থেকেও রেমিট্যান্স আসা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

শেয়ারনিউজ, ২১ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে