ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

ক’মাস বাদেই ঘর আলো করে আস ছোট্ট অতিথি, লঞ্চের রেষারেষিতে সব শেষ

২০২৪ এপ্রিল ১২ ১৫:১০:০২
ক’মাস বাদেই ঘর আলো করে আস ছোট্ট অতিথি, লঞ্চের রেষারেষিতে সব শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কয়েক মাস পরে ঘর আলোকিত করার কথা ছিল নতুন অতিথির। গর্ভবতী স্ত্রী ও চার বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ বেলাল। কিন্তু মায়ের কাছে পৌঁছানো যায়নি। লঞ্চ চালকদের ধাক্কায় সব শেষ পুরো পরিবারের। এদিন একই পরিবারের তিনজন মারা গেছেন।

ঢাকার সদরঘাটের পল্টুনে দুটি লঞ্চ ভেড়ানো নিয়ে ধাক্কাধাক্কিতেই মৃত্য়ু হল একই পরিবারের তিনজনের। নিহতদের নাম মহম্মদ বেলাল (৩০), তাঁর স্ত্রী মুক্তা ও কন্যা মাইশা (৪)। পন্টুনে বেঁধে রাখার সময় দড়ি ছিড়ে, অন্য একটি লঞ্চে ধাক্কা লেগে ৫ জনের মৃত্যু হয়। ইদের দিন বিকেলে এই ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার পর একই পরিবারের পিরোজপুর জেলার মহম্মদ বেলাল (৩০), তাঁর স্ত্রী মুক্তা (২৪) এবং তাঁদের চার বছর বয়সী মেয়ে মাইশাকে উদ্ধার করে, ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

বেলালের পরিবার ছাড়াও দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন ঠাকুরগাঁওয়ের রবিউল (১৯) ও পটুয়াখালীর রিপন হাওলাদার (৩৮)। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন মুক্তার আত্মীয় জহুরুল ইসলাম। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে বেলাল তার বাবাকে হারিয়েছেন। বাড়িতে শুধু তার মা আলেয়া বেগম। তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় থাকেন। যতবার আইডিতে বিরতি পেত বেলাল তার মায়ের কাছে যেতেন।

বেলাল তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে থাকেন ঢাকার নিটকবর্তী গাজীপুরে। স্ত্রী মুক্তা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায়, এবার বেলাল ভিড় এড়াতে ইদের দিন বাড়ি যাবেন বলে ঠিক করে রাখেন। কিন্তু লঞ্চচালকদের বেপোরোয়া প্রতিযোগিতার বলি হলে গোটা পরিবারের।

জানা গিয়েছে, বেলাল একটি পোশাক কারখানার চাকরি করতেন। ১৪ হাজার টাকা বেতন দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। তাই গাজীপুরে একটি দরজির দোকান দেন তিনি। স্ত্রী মুক্তাই দরজির দোকান চালাতেন। দুজনের আয়ে চলছিল সংসার। তবে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরই দরজির দোকানটি ছেড়ে দেন বেলাল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনে লঞ্চে ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন বেলাল, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে সহ অনেকে। তখন ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে যাত্রী ওঠানোর অপেক্ষায় ছিল এমভি তাসরিফ-৪ এবং এমভি পূবালী-১ নামের দুটি লঞ্চ।

হঠাৎ ফারহান-৬ লঞ্চটি তাসরিফের ডান পাশ দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। তখন ফারহানসহ তিনটি লঞ্চের চালকরা প্রায় ১০ মিনিট ধরে ধাক্কাধাক্কি করে। সেই ধাক্কা লেগে হঠাৎ পন্টুনে বাঁধা এমভি তাসরিফের দড়ি ছিঁড়ে যায়। মোটা ওই দড়ি মুহূর্তের মধ্যে এমভি পূবালী-১–এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বেলাল, তাঁর স্ত্রী, সন্তানসহ পাঁচজনকে আঘাত করে।

বেলালসহ অন্যরা পন্টুনে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এতে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন তারা। মাথা থেকে রক্ত পড়তে থাকে। পরে যাত্রীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এদিকে লঞ্চ দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দুটি লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর জনসংযোগ কর্মকর্তা এহতেশামুল পারভেজ।

শেয়ারনিউজ, ১২ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে