ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

সৌদিতে যাওয়ার পর নানাভাবে নির্যাতন করেছে নিয়োগকর্তা

২০২৪ এপ্রিল ০৭ ০৫:৪৮:১০
সৌদিতে যাওয়ার পর নানাভাবে নির্যাতন করেছে নিয়োগকর্তা

প্রবাস ডেস্ক : সৌদি আরবে বেশির ভাগ অভিবাসী নারী গৃহকর্মী যারা পরিবার পরিজন ছেড়ে বিদেশে যায় তারা নির্যাতনের শিকার হয়। দেশে ফেরার পর তাদের মুখে নির্যাতনের ভয়ংকর বর্ণনা শুনে হতবাক হতে হয় সবাইকে।

যেসব নির্যাতিত নারী পালিয়ে দেশে ফিরে এসেছে, তাদের শরীরেও নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাড়িতে তাদের উপর ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খোলে। অনেকে সামাজিক কারণে তাদের মুখ বন্ধ রাখে।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার রাবিয়া খাতুন (৩৮) নিয়োগকর্তার নির্যাতনের শিকার হয়ে সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর মানসিকভাবে অসুস্থ রাবিয়া বাড়ি ফিরে তার পরিবারকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। অবশেষে গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়দের সহায়তায় ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকালে সৌদি ফেরত রাবিয়া খাতুনকে নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার সদরাবাদ গ্রামে নিজ বাড়িতে ফেরে তার পরিবার। রাবিয়া নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের সদরাবাদ গ্রামের নবির হোসেনের মেয়ে ও কাজল উল্লাহর স্ত্রী।

পরিবার ও ব্র্যাক সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ২০২২ সালে রিক্রুটিং এজেন্সি দ্য ইফতি ওভারসিজ (আরএল-৮৯৪) এর মাধ্যমে গৃহকর্মী ভিসায় রাবিয়া খাতুন সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর তার জীবনে নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।

বুধবার (৩ এপ্রিল) রাতে সৌদি আরব থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরেন রাবিয়া। রাতে বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ক্যানপিতে লক্ষ্যহীন চলাফেরা করতে দেখে এপিবিএন সদস্যরা তাদের অফিসে নিয়ে যান।

তবে তার কাছে কারও মোবাইল নম্বর বা কোনও তথ্য না থাকায় পরিবার খুঁজে নিরাপদে হস্তান্তরের জন্য এপিবিএন সদস্যরা ঢাকার আশকোনার ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে পাঠায়।

রাবিয়ার পরিবারের সন্ধান পেতে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার মো. আল আমিন নয়ন গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা চান। পরে হবিগঞ্জের স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন কিছু যুবকের প্রচেষ্টায় রাবিয়া খাতুনের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার মো. আল আমিন নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ হয় রাবিয়ার পরিবারের। মায়ের সন্ধান পেয়ে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাতেই রাবিয়া খাতুনের মেয়ে তাছলিমা আক্তার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের কর্মকর্তারা রাবিয়াকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। শনিবার বিকালে সৌদি ফেরত এই নারীকে নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার সদরাবাদ গ্রামে নিজ বাড়িতে ফেরে পরিবার।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের রয়েছে আলাদা অভিবাসন কর্মসূচি। প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সাত বছরে ৭১৪ নারী শ্রমিকের লাশ এসেছে দেশে। যার মধ্যে ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যুর সনদ লেখা লাশের সংখ্যা ২৬২।

প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে সৌদি আরব, জর্দান, লেবানন ও ওমানে। এই সময়ে মারা গিয়েছেন সৌদি আরবে ২০২ জন, জর্দানে ৯৬ জন, লেবাননে ৭৮ জন ও ওমানে ৫৮ জন। সালের হিসেবে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মৃত্যু ঘটেছিল ২০১৯ সালে, ১৩৯ জন।

এ ছাড়াও ২০১৬ সালে ৫২ জন, ২০১৭ সালে ৯৪, ২০১৮ সালে ১১০, ২০২০ সালে ৮০, ২০২১ সালে ১২২ এবং ২০২২ সালে ১১৭ জন। সবচেয়ে বেশি ৩৭ শতাংশ ছিল স্বাভাবিক মৃত্যু। এ ছাড়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত ১৯ শতাংশ, আত্মহত্যা ১৬, দুর্ঘটনা ১৫ এবং অন্যান্য কারণে ১৩ শতাংশ নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়। বছরে গড়ে তিন থেকে চার হাজার নারী ফিরতে বাধ্য হন।

১৯৯১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১২ লাখ নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন। অতিরিক্ত কাজের চাপ, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে দেশে ফিরে আসেন তাদের অনেকেই। বিদেশে নির্যাতনের কারণে মারা যান অনেক নারী কর্মী। মৃত নারী শ্রমিকের পরিবারের সদস্যসহ অভিবাসন-বিশেষজ্ঞরা মৃত্যুর এই কারণ বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

রাবিয়া খাতুনের স্বামী কাজল উল্লাহ বলেন, আমার স্ত্রী সৌদি আরব যাওয়ার পর মাঝে মধ্যে যোগাযোগ হয়েছিল। যাওয়ার পর থেকে তার ওপর নানাভাবে নির্যাতন করে নিয়োগকর্তা। বিগত ১ মাস ধরে তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না।

আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম, শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পাই তিনি দেশে এসেছেন, তিনি ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে আছেন। পরে আমার মেয়ে ঢাকায় গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত নির্যাতনের কারণে রাবিয়া মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার চিকিৎসা দরকার। কাজল উল্লাহ তার স্ত্রীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিচার দাবি করেন এবং নারীদের বিদেশে পাড়ি জমাতে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. আল আমিন নয়ন বলেন, রাবিয়া আমাদের জানিয়েছেন, সৌদিতে তার নিয়োগকর্তা তাকে নির্যাতন করেছেন। তিনি এখন মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই তাকে একা বাড়িতে পাঠাতে পারিনি।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তায় তার পরিবারকে খুঁজে পেয়েছি। পরে শনিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি।

শেয়ারনিউজ, ০৬ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে