ঢাকা, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

হাসিনার পতনের পর সাবেক স্পিকারের রহস্যময় অন্তর্ধান

২০২৫ অক্টোবর ২৬ ১০:১৭:৩৬
হাসিনার পতনের পর সাবেক স্পিকারের রহস্যময় অন্তর্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কোথায় আছেন—এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারি কোনো সংস্থার কাছেই তার অবস্থান সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য নেই। তবে সূত্র বলছে, তিনি স্বামীসহ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন—এমন গুঞ্জন এখন সরকারি মহল ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে।

তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলার তদন্ত এক বছরেও শেষ হয়নি। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার এখন আইনি ব্যবস্থা নিতে দ্বিধায় রয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে এ নিয়ে মতবিরোধ ও সিদ্ধান্তহীনতা চলছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার দীর্ঘ মেয়াদি শাসনকালে ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে বৈধতা দিতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন’ শিরীন শারমিন। তারা বলেন, আদালতের নির্দেশ পেলে গ্রেপ্তারসহ পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুত। তবে তদন্ত বিলম্বের দায় তারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপাচ্ছেন।

একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা বলেন,“সাবেক স্পিকারের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অফিসিয়াল তথ্য নেই। কেউ বলছেন তিনি ঢাকায় আছেন, কেউ বলছেন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গেছেন।”

আরেক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি “নীতিনির্ধারক পর্যায়ের” এবং আদালতের পরোয়ানা বা নির্দেশনা ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না।

গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, শিরীন শারমিন ঢাকার একটি সুরক্ষিত এলাকায় ভাইয়ের বাসায় স্বামী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে আত্মগোপনে আছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তিনি কয়েক মাস আগে রাজধানীর একটি নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়ে নতুন সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মকর্তা এতে তাকে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে,“অজ্ঞাত স্থান থেকে আঙুলের ছাপ ও আইরিস দিয়ে আবেদন করায় শিরীন শারমিন ও তার স্বামীর পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করা হয়েছে।”

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ ঘটনায় জড়িত দুর্নীতিপ্রবণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু করেছেন।

২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট রংপুরে দিলরুবা আক্তার নামে এক নারী একটি হত্যা মামলা করেন, যেখানে সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিনকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তার স্বামী মুসলিম উদ্দিনকে “শিরীন শারমিনের নির্দেশে হত্যা করে।”

বাদী অভিযোগ করেন,“এক বছর পেরিয়ে গেলেও সিআইডি এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি, এমনকি আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।”

সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর সামিউল আলম বলেন,“তদন্ত চলছে, অনেকদূর এগিয়েছে। আশা করছি দ্রুত আদালতে চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হবে।”

ড. শিরীন শারমিন ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর।২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরে ২০১৩ সালে স্পিকার হন এবং টানা চার মেয়াদ এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন,“শিরীন শারমিন হাসিনার সরকারের অপশাসনের আইনি বৈধতা দিয়েছেন। এখন তিনি হত্যা মামলার আসামি; তাই তার উচিত আদালতে আত্মসমর্পণ করা।”

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পরও শিরীন শারমিন সংসদ ভবনের বাসায় অবস্থান করছিলেন।সেসময়ও তিনি “হাসিনা পালিয়ে যাবেন তা বিশ্বাস করতেন না।”পরিস্থিতি অবনতির পর তিনি স্বামী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে গোপনে সংসদ এলাকা ত্যাগ করেন।

পরে ২ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত স্থান থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। রাষ্ট্রপতি তাৎক্ষণিকভাবে তার পদত্যাগ গ্রহণ করেন।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন,“বিষয়টি আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন। তদন্ত শেষ হলে আদালত পরবর্তী আদেশ দেবে।”

আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জুলাই অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে, এবং এ জন্য বিশেষ কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সদস্য মো. শহিদ উল্লাহ বলেন,“সাবেক স্পিকারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনা হবে।”

মুয়াজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে