ঢাকা, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
Sharenews24

৩০ মাসেও ক্ষতিপূরণ পায়নি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা

২০২৫ জুন ২১ ০৭:১৪:১৪
৩০ মাসেও ক্ষতিপূরণ পায়নি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় ৩০ মাস আগে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (এএমসি) ইউনিভার্সাল ফিন্যান্সিয়াল সলিউশনস (ইউএফএস) ক্লায়েন্টদের তহবিল থেকে ২০৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু এখনও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখনো এক টাকাও ফেরত পাননি।

এই তহবিল তছরুপের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে ইউএফএস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর সহ অভিযুক্তদেরকে ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি অভিযুক্তরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কাছে ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে ১২৫ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হাইকোর্টের নির্দেশ বা বিএসইসির কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি – কোনটিই পূরণ হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে জালিয়াতির শিকার ইউএফএস-এর চারটি ওপেন-এন্ডেড ফান্ডের ট্রাস্টি, সিকিউরিটিজ কমিশন এবং তদন্ত সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কেউই অর্থ আদায় বা অভিযুক্তদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি) ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে। নিম্ন আদালত ইউএফএস-এর শীর্ষ নির্বাহী সৈয়দ হামজা আলমগীর সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে হামজা আলমগীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

অন্যান্য অভিযুক্তরা হয় আগাম জামিন পেয়েছেন অথবা পলাতক রয়েছেন। সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক দায়ের করা একটি ফৌজদারি মামলার তদন্তভার বর্তমানে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর হাতে রয়েছে।

আইনি জটিলতার পাশাপাশি তহবিলগুলির আর্থিক অবস্থাও চরম নাজুক। ইউএফএস-এর সাথে যুক্ত ব্যাংক এবং বিও অ্যাকাউন্টগুলো দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক স্থগিত রয়েছে। এর ফলে তহবিলগুলি কেবল তাদের পোর্টফোলিওতে সিকিউরিটিজ ট্রেড করতে পারছে না, তা-ই নয়, তারা তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ডও গ্রহণ করতে পারছে না।

এর আগে ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ইউএফএস তহবিলগুলি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলি থেকে ৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ডিভিডেন্ড সংগ্রহ করতে পারেনি। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতের কারণে বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যতে তাদের বিনিয়োগ থেকে কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা আরও কমে গেছে।

এদিকে, দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ইউএফএস-এর শীর্ষ নির্বাহীগণ, বিশেষ করে হামজা আলমগীর, এফডিআর-এ বিনিয়োগের অজুহাতে এবং সম্পদ বিক্রি করে প্রাপ্ত নগদ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ২০২২ সালে ইউএফএস ইউনিট তহবিলগুলির পোর্টফোলিও থেকে শেয়ার বিক্রি করে প্রাপ্ত ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মিউচুয়াল ফান্ডগুলির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। এই অর্থ হামজা আলমগীরের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং তার সহযোগীদের মালিকানাধীন কোম্পানিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

দুদকের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, ইউএফএস নির্বাহীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ অননুমোদিত বাণিজ্যিক পত্রে বিনিয়োগ করেছিলেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, অভিযুক্তরা এই ধরনের বিনিয়োগের জন্য ট্রাস্টি আইসিবি-এর কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) পেয়েছিল। ফলস্বরূপ আইসিবি-এর চার সিনিয়র কর্মকর্তাকে দুদক কর্তৃক দায়ের করা মামলার অভিযুক্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি, ইউএফএস কর্তৃক নিযুক্ত দুই নিরীক্ষক তহবিলগুলির ভুয়া আর্থিক বিবরণী তৈরিতে সহায়তা করেছিল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দীর্ঘমেয়াদী কেলেঙ্কারি এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার স্থবিরতা দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়টি নিয়ে আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন মনে করেন তাঁরা।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে