ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে: এসআইবিএল ভারপ্রাপ্ত এমডি

২০২৫ জানুয়ারি ১৭ ০৮:০৪:১৬
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে: এসআইবিএল ভারপ্রাপ্ত এমডি

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুস সায়দাত বলেছেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।

এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন,“২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে আমরা ৩৭৪টি আউটলেটের মাধ্যমে তিন লাখ চার হাজারটি বিভিন্ন ধরনের হিসাব খুলতে সক্ষম হয়েছি। সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৬০ কোটি টাকা।”

একটি প্রথম শ্রেণির গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, “হাঁটি হাঁটি পা পা করে আট বছরে এখন দেশজুড়ে আমাদের ৩৭৪টি আউটলেট বিস্তার লাভ করেছে। এর মাধ্যমে এবং আরও নতুন আউটলেট খোলার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সারাদেশে ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কাছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এসআইবিএল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসারে করণীয় বিষয়ে বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং শুরুর দিকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। সমবায় কারবার এবং ডেসটিনির মতো এমএলএম বিজনেসের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে বিশ্বাস এবং আস্থার সংকট ছিল। তাছাড়া সীমিত ব্যাংকিং সেবা, আঙুলের ছাপ দিয়ে লেনদেন, চেক বই ব্যবহার না করতে পারা– এসব কারণে আউটলেটে অনেক গ্রাহকের হিসাব খোলা এবং লেনদেনে অনীহা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুসারে বাংলাদেশের যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এজেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখে, যদি না সে সরকারি চাকরি অথবা ব্যাংকে কর্মরত থাকে অথবা আদালত দ্বারা অভিযুক্ত হয়।

নাজমুস সায়দাত বলেন, তাছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করেছে। এজেন্টদের কমিশন অপ্রতুল হওয়ায় সারভাইব করা মুশকিল হয়ে গেছে। এসব বিবেচনায় সরকার এজেন্ট কমিশনের ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করে এজেন্টদের প্রণোদনা দিতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এজেন্ট ব্যাংকিংকে এখনও সব ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। তার একটু বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যদি কোনো এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থাকে, সেই ব্যাংকের স্টেটমেন্ট কোনো দেশের ভিসা ফেস করার জন্য সাবমিট করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় না। বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা উপস্থাপন করেছিলাম; কিন্তু এগুলো এখনও আগের অবস্থায় রয়ে গেছে। এ চ্যালেঞ্জ দূর করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করতে পারে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, নতুন বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে গ্রাহকের আস্থা ফেরানো, আমানত ও ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, নেটওয়ার্ক বিস্তার ও উন্নত গ্রাহকসেবা প্রদান অন্যতম। দেশে ২০১৪ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং যাত্রা শুরু করে এবং এখন পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংক দেশব্যাপী আউটলেট পরিচালনা করছে। বিভিন্ন দেশে এজেন্ট ব্যাংক যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, বাংলাদেশও অনেকাংশে সেটি পূরণে সাফল্য পেয়েছে। তার পরও বিশেষ করে বৃহৎ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সম্পৃক্ত করা, তাদের উন্নতর এবং নিরাপদ সেবার মাধ্যমে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও জীবিকার সংস্থান করার ক্ষেত্রে আরও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে আজ এজেন্ট ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এই উদ্যোক্তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। দেশের মফস্বল ও গ্রামের সমবায় কারবারের সঙ্গে ব্যাংকের এজেন্টদের একটা অস্তিত্বের লড়াই চলছে।

তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসায় কিছু মূলধন তহবিল এবং অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় আছে, যা গ্রামের তরুণ শিক্ষিত বেকারদের অনেক সময় জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। অপরদিকে সমবায় কারবারের মতো ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলো মূলধন তহবিল এবং অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় ছাড়া সমাজের মানুষের কাছ থেকে সহজে আমানত সংগ্রহ করে আত্মসাৎ এবং প্রতারণা করে উধাও হয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব এজেন্টগুলোতে পড়ছে। আবার অপেক্ষাকৃত কম আয়ের কারণে এজেন্টগুলো ভালো বেতনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে অদক্ষ এবং প্রযুক্তি নিরক্ষর জনবল দিয়ে এজেন্ট পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে তাদের অনেকে, যা খুব বিপজ্জনক।

ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, দেশের ভঙ্গুর গ্রামীণ অর্থনীতির কারণে আপামর জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সম্পৃক্ত করতে এজেন্টগুলো এখনও পুরোপুরি সফল হতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে শুধু হিসাব খোলা, নগদ জমা, নগদ উত্তোলন, কিছু প্রবাসীর রেমিট্যান্স গ্রহণ, বিদ্যুৎ বিল প্রদান ও বিতরণের মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং সীমাবদ্ধ থাকাটা এজেন্টদের কাঙ্ক্ষিত মুনাফায় না পৌঁছানোর অন্যতম কারণ। কাঙ্ক্ষিত মুনাফা না করতে পেরে অনেক এজেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং অনেক এজেন্ট অসদুপায় অবলম্বন করছে, যা এই মুহূর্তে দেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

“আর তাই এখন এই এজেন্টদের কীভাবে টেকসই করা যায়, তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকগুলোর এজেন্টদের ওপর মনোযোগ দিতে হবে– কী করে এজেন্ট কাঙ্ক্ষিত মুনাফা করে টিকে থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগে সহজ শর্তে এজেন্ট ব্যবসা করার জন্য ঋণের বাবস্থা করা যেতে পারে। বিনিয়োগসহ শাখা-উপশাখার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন ধরনের সেবা এজেন্ট পয়েন্ট থেকে চালু করতে হবে, যার মাধ্যমে এজেন্ট লাভজনকভাবে এই ব্যবসা করতে পারে। যেহেতু তারা প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তা, তাই তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ ফান্ড অথবা যে কোনো তহবিল থেকে ন্যূনতম অঙ্কের ঋণ অথবা প্রণোদনা দেওয়ার কথা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে” বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

নাজমুস সায়দাত বলেন, নিয়ন্ত্রণকারী ব্যাংককে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে নতুন আউটলেট খুলে তারা বিপদের সম্মুখীন না হয়। এই উদ্দেশ্যে অর্থঋণ আইন এবং হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা জরুরি, যাতে ব্যাংকগুলো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। যদি গ্রাহকদের আমানত তছরুপের বিষয়ে কোনো অভিযোগ কোম্পানির কাছে আসে, তাহলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট এজেন্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে