ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

বাংলাদেশের সংবিধানে বড় সংস্কার: তিনটি মূলনীতি বাদ, নতুন চারটি প্রস্তাব

২০২৫ জানুয়ারি ১৫ ১৮:৩৩:০৫
বাংলাদেশের সংবিধানে বড় সংস্কার: তিনটি মূলনীতি বাদ, নতুন চারটি প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সংবিধানে সাম্প্রতিক সময়ে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা একটি বড় পরিবর্তন আনার দিকে ইঙ্গিত করছে। অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানে চারটি নতুন মূলনীতি যুক্ত করার পাশাপাশি তিনটি পুরানো মূলনীতি বাদ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংবিধানিক কাঠামোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

প্রধান সুপারিশসমূহ:

ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব:

- ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি ছিল: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, এবং ধর্মনিরপেক্ষতা।

তবে, বর্তমান কমিশন প্রস্তাব করেছে যে, এই তিনটি মূলনীতি বাদ দেয়া হোক এবং শুধুমাত্র গণতন্ত্র বজায় রাখা হোক। এই তিনটি মূলনীতি (ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ) বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত হতে পারে, এমন বিবেচনা থেকে এগুলো বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

নতুন চারটি মূলনীতি যুক্ত করার প্রস্তাব:

- সাম্য : সমাজে সকল মানুষের সমান সুযোগ এবং অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কেউ কোনো কারণে বৈষম্যের শিকার না হয়।

- মানবিক মর্যাদা : মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং মর্যাদার সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সমাজের প্রতিটি নাগরিকের জন্য শ্রদ্ধা এবং মর্যাদার অধিকারকে নিশ্চিত করবে।

- সামাজিক সুবিচার : সমাজের সকল স্তরের মধ্যে সমতা এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা, বিশেষত সমাজের অবহেলিত ও নিপীড়িত শ্রেণীর জন্য।

- বহুত্ববাদ : দেশে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, জাতি, সংস্কৃতির মানুষের সহাবস্থান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী সমাজ হিসেবে সুসংগঠিত থাকে।

- গণতন্ত্র : বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্রকে পুনরায় গুরুত্ব দেয়া হবে, যাতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষিত থাকে।

সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোটের প্রস্তাব:

- সংবিধান সংস্কারের জন্য গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে জনগণ সরাসরি তাদের মতামত দিতে পারে। এটি জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং মতামতকে সম্মান জানিয়ে সংবিধানের পরিবর্তন আনার একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে।

দ্ব চেম্বার্স বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ:

- বর্তমান একককক্ষ সংসদের পরিবর্তে দ্ব চেম্বার্সবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে একটি উচ্চকক্ষ এবং একটি নিম্নকক্ষ থাকবে, যা দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে আরও ভারসাম্য সৃষ্টি করবে এবং আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ:

- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান:

এই নতুন মূলনীতিগুলো দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং পরবর্তীতে জনগণের আন্দোলন, যা অধিক সামাজিক সুবিচার এবং মানবিক মর্যাদার জন্য ছিল, এসব নতুন মূলনীতির মাধ্যমে সংবিধানে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে।

- সমাজের উন্নয়ন:

সাম্য, মানবিক মর্যাদা, এবং সামাজিক সুবিচারের উপর জোর দিয়ে সংবিধানে নতুন এই পরিবর্তনগুলো সমাজে বৈষম্য কমাতে এবং জনগণের মধ্যে ন্যায়বিচারের অনুভূতি তৈরি করতে সহায়তা করবে।

- ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে বহুত্ববাদ:

ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে বহুত্ববাদী সমাজ গড়ার প্রস্তাব বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সমাজের মূল্যবোধকে আরও ভালোভাবে প্রতিফলিত করবে। এর ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্ম, জাতি, এবং সংস্কৃতির জনগণের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থান আরও দৃঢ় হবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ:

- এই সুপারিশগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সম্মতি জানায়, তাহলে এসব সংস্কারের প্রস্তাব কার্যকর করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে।

- গণভোট এবং দ্ব চেম্বার্স বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হলে আরও বিস্তারিত আলোচনা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে।এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক হতে পারে। এই নতুন মূলনীতিগুলো দেশে সমতা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং বহুত্ববাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে। তবে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে এটি দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে