ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

সিআিইডির জালে নাফিজ সরাফত, তার স্ত্রী ও হাসান ইমাম

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০১ ২৩:১২:২৪
সিআিইডির জালে নাফিজ সরাফত, তার স্ত্রী ও হাসান ইমাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তার স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদ এবং হাসান তাহের ইমাম ও তাদের প্রতিষ্ঠান রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

সম্প্রতি সিআইডির এক বৈঠকে নাফিজ সরাফাত ও তার স্ত্রীসহ তাদের প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তার স্ত্রী আনজুমান আরা শহীদ ও হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে।

নাফিজ সরাফাত ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স নেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন হাসান তাহের ইমাম।

রেইসের অধীনে বর্তমানে ১৩টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে। ফান্ডগুলোর অর্থ ব্যক্তিস্বার্থে বিনিয়োগ করে নাফিজ সরাফাত, আনজুমান আরা শহীদ ও হাসান তাহের ইমাম ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) পরিচালক বনে যান। একই কৌশলে নাফিজ সরাফাত তার স্ত্রীকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক বানান। তবে এতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর কোনো লাভ হয়নি।

শেয়ারবাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে রেইস ম্যানেজমেন্ট ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড গঠন করেছে। ফান্ডগুলোর সম্মিলিত আকার প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।

ফান্ডের অর্থ দিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যে এফডিআর খোলা হয়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেশ করে সেই এফডিআরগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এর ফলে ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা কোটি কোটি টাকার মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়। বিপরীতে লাভবান হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।

অভিযোগ রয়েছে, এসটিডি/এসএনডি অ্যাকাউন্টে মাত্র তিন-চার শতাংশ সুদে ফান্ডের সাড়ে ৬০০ বা ৭০০ কোট টাকা জমা রাখা হয়। সুদের দুই-তিন শতাংশ অর্থ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেশ করে আত্মসাৎ করা হয়। শেয়ারবাজার থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ডের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বণ্টনের নিয়ম থাকলেও রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানেনি। বরং ডিভিডেন্ডের বেশিরভাগ টাকাই তারা আত্মসাৎ করেছে।

এছাড়া বিজিআইসি নামে ব্রোকারেজ হাউজে শেয়ার কেনার জন্য যে টাকা নেওয়া হয়, সেই টাকায় ফান্ডের নামে শেয়ার ক্রয় না করে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে শেয়ার ক্রয় করা হয়। এভাবে ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকার মুনাফা বঞ্চিত করে ওই টাকা তারা আত্মসাৎ করেন।

প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নাফিজ সরাফাতের সুসম্পর্কের চিত্র গণমাধ্যমে উঠে আসে। গোপালগঞ্জের এই ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে ‘ফুফু’ বলে সম্বোধন করতেন। আর সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ছিলেন তাঁর ‘চাচা’। গোপালগঞ্জের মানুষ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে তিনি ‘কাজিন’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।

শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে নাফিজ সরাফাতের সম্পর্কের কথা ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের প্রায় সবারই জানা।

মাত্র ১৩ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক, শেয়ারবাজার, বিদ্যুৎ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যমসহ আরও কিছু খাতে রহস্যজনক কিন্তু অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পান নাফিজ সরাফাত।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে