ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস

২০২৪ জানুয়ারি ০৬ ০৭:২৬:২১
বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস

পরবাস ডেস্ক : নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হাবপ্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জ্যাকসন হাইটস ব্যাপক গাড়ি পার্কিং, ফুটপাতে অবৈধ দোকান, উচ্চস্বরে মিছিল-স্লোগানসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, হোমলেস ও ভবঘুরেদের উৎপাত, ময়লার স্তুপ ইত্যাদির কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব কারণে ব্যাহত হচ্ছে দৈনন্দিন জীবন। হতাশ হয়ে জ্যাকসন হাইটস এলাকার অনেক বাসিন্দা শহরের অন্য এলাকায় চলে গেছেন।

তবে জ্যাকসন হাইটস এলাকার অবনতি হলেও ব্রঙ্কস, ওজোনপার্ক ও ব্রুকলিনে পরিবেশের উন্নতি হয়েছে। অনেকে বসবাসের জন্য এসব এলাকাকে বেছে নিচ্ছেন। তবে কুইন্সের জ্যামাইকা, হলিস ও কুইন্স ভিলেজ বাংলাদেশিদের কাছে আদর্শ স্থান হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

নিউইয়র্ক সিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশিদের বসবাস কুইন্সে। আয়তনের দিক থেকেও নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বড় কুইন্স বরো। অন্যদিকে কুইন্সের সবচেয়ে জমজমাট এলাকা জ্যাকসন হাইটস।

বিশেষ করে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ব্যবসার প্রসার ঘটেছে এই এলাকা থেকেই। বর্তমানে জ্যাকসন হাইটসের ব্যস্ততা কুইন্সের যে কোনো এলাকাকে ছাড়িয়ে গেছে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটলেও বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে উঠছে দিন দিন।

গত বছরের নভেম্বরে জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে কুইন্স ভিলেজে স্থানান্তর হয়েছেন বাংলাদেশি আবদুর রহমান। তিনি বলেন, গত ৯ বছর ধরে সপরিবারে সিংহ মার্কা বিল্ডিংয়ে ছিলেন। খুব আরামেই ছিলাম।

কিন্তু দিন দিন এই এলাকার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। পরিবার নিয়ে এই এলাকায় বাস করা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। যত্রতত্র ময়লার স্তুপ, ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট, অযাচিত আড্ডা, উচ্চস্বরে গাড়ির হর্নসহ নানান কারণে ছেলে-মেয়েরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল।

তিনি জানান, স্কুল থেকে ফিরে বাসায় তারা বিরক্ত প্রকাশ করতো। পরিবারের চাপেই একপর্যায়ে বাসা স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি আরও জানান, পরিবহন সুবিধা, হাতের কাছে বাজার-সদাই, এসব বিবেচনায় আনলে একসময় জ্যাকসন হাইটসে বসবাসের জন্য উত্তম ছিল। কিন্তু এখন তা অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

জ্যাকসন হাইটসের দক্ষিণ এশিয় মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন রাস্তাঘাট ও এর আশপাশের নোংরা পরিবেশ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে কয়েক বছর আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এই নিয়ে তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল।

নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা গণমাধ্যমেও জ্যাকসন হাইটসের পরিবেশ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে এই এলাকায় আসা মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়েনি।

জ্যাকসন হাইটস এলাকায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এলাকার পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। পার্কিং স্বল্পতার কারণে এই এলাকার বিভিন্ন সড়কে ডাবল পার্কিং নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ম্যানহাটনের রাস্তায় গাড়ি চলাচলে টোল আদায়ের ঘোষণার পর সেখানকার অফিস-আদালতের কর্মীরা জ্যাকসন হাইটস এলাকায় ফ্রি পার্কিংয়ে গাড়ি পার্ক করছেন।

এরপর সাবওয়েতে চড়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। বাড়তি গাড়ির চাপে জ্যাকসন এলাকায় নানান কাজে আসা লোকজন গাড়ি পার্ক করতে পারছেন না। একপর্যায়ে তারা গাড়ি ডাবল পার্ক করে কেনাকাটা করছেন। আর এতে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সব সমস্যাকে ছাড়িয়ে গেছে ফুটপাতের দোকানপাট। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে শত শত দোকানপাট গড়ে উঠেছে ফুটপাতে।

বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজেদের জায়গায় এবং পথচারিদের হাঁটার জায়গায় পণ্য রেখে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ফলে পথচারিরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন না। এসব বিষয়ে সিটিতে অসংখ্য অভিযোগ দায়ের করা হলেও কিছুতেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

এদিকে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজা বিনোদনের কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হলেও এখন তা অনেকটা ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া।’ ৩৭ রোড একসময় বাস স্টপেজ ছিল। ছিল ঈগল থিয়েটার। ছিল বাংলাদেশি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান। সবমিলিয়ে ব্যস্ত ছিল এলাকাটি।

একসময় ঈগল থিয়েটার বন্ধ হয়ে যায়। ৩৭ রোডে অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনার অজুহাত দেখিয়ে ২০১১ সালের শেষের দিকে ৭৩ ও ৭৪ স্ট্রিটের মধ্যবর্তী ৩৭ রোডটি বন্ধ করে ছোট পার্ক করার সিদ্ধান্ত হয়। নাম দেওয়া হয় ডাইভারসিটি প্লাজা। এর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালিন কাউন্সিলম্যান (ডিস্ট্রিক্ট-২৫) ড্যানিয়েল ড্রম। ২০১২ সালে উদ্বোধন করা হয় ডাইভারসিটি প্লাজা।

কিন্তু ব্যস্ততম একটি সড়ক বন্ধ করে ডাইভারসিটি প্লাজা করার বিরুদ্ধে ছিলেন সেখানকার কয়েকজন ব্যবসায়ী। এরমধ্যে অন্যতম ছিলেন ফ্যাশন হাউজ ‘পরিধান’-এর কর্ণধার রুহুল আমিন সরকার। কমিউনিটি লিডার আব্দুর রশিদ, পাকিস্তানী ব্যবসায়ী আগা সালেহসহ কয়েকজনকে নিয়ে নিউইয়র্ক স্টেট ও সিটি প্রশাসনে দৌঁড়ঝাপ করেছিলেন তিনি। দরখাস্ত দিয়েছিলেন।

ডাইভারসিটি প্লাজার ভবিষ্যত কী হতে পারে তা তুলে ধরেছিলেন ওই দরখাস্তে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি তাতে। বরং ২০১৪ সালে ডাইভারসিটি প্লাজা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেন রুহুল আমিন সরকার। তার মতো অনেকেই সেখান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এখন যে ইত্যাদি রেস্টুরেন্ট, সেটিও দুইবার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।

গত বছর একজন মাতাল রেস্টুরেন্টের সামনে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। বর্তমানে রেস্টুরেন্টটির মালিক নিজস্ব নিরাপত্তায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

দিন রাত সবসময়ই মদ্যপ ও মাদকসেবীদের দখলে থাকছে ডাইারসিটি প্লাজা। সন্ধ্যার পর সেখানে অবস্থান দূরে থাক, ওই এলাকা অতিক্রম করা যায় না।

এছাড়া মদ্যপ ও মাদকসেবীদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই মারামারির ঘটনা ঘটছে। ডাইভারসিটি প্লাজার এখন পুরোটা জুড়ে ফুটপাতের মত দোকান।

বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে আসা মুজিবুর রহমান জ্যাকসন হাইটস এলাকার পরিবেশ দেখে হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে এই জ্যাকসন হাইটসে কত সুন্দর দেখেছি। সবকিছু কত পরিপাটি ছিল।

কিন্তু এখন পরিস্থিতির অনেক অবনতি হয়েছে। জ্যাকসন হাইটসে দেখলে বিশ্বাসই হয় না, এটা আমেরিকার কোনো শহর!

শেয়ারনিউজ, ০৫ জানুয়ারি ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে