ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

শোক-শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেছে

২০২৩ আগস্ট ১৫ ২২:০১:৩২
শোক-শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: শোক, শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেছে সমগ্র জাতি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আজ মঙ্গলবার পালিত হয়েছে স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস।

শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের জোরালো দাবী ছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারী ও কুশীলবদের ধরে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য গণতদন্ত কমিশন গঠন করার।

শোক দিবসে দেশজুড়ে নানা কর্মসূচিতে ছিল শোকের আবহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার ছিল মানুষের কণ্ঠে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও মেয়ে বেবি, সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন।

ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড যখন সংগঠিত হয় সেই সময় বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

আজ (মঙ্গলবার) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত তাঁর প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এই সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।

পরে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে দলের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও এস এম কামাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

এরপর শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রওনা হন। সেখানে তিনি তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ত্যাগ করার পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরও শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ বেতার, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ বিভিন্ন দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সর্বস্তরের হাজারো মানুষ।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতার ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং পরে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেন করেন। এ সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শোক দিবস পালন করেছে।

শোক দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, বঙ্গবন্ধুর সমাধি ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কালো ব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

ভোরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে শোক দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।

বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ১০০ বার কুরআন খতম ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুরআন খতম ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করে। কুরআন খতম শেষে জাতির পিতা ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এদিকে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে (রাত ১২ টা ১ মিনিট) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭-এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০) মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও বিশেষ প্রার্থনা, সকাল ৯টায় তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করে।

এছাড়াও জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুস্থ ও গরীব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটগুলো।

এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।

এছাড়াও আওয়ামী যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করে। সূত্র: বাসস

শেয়ারনিউজ, ১৫ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে