ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের

২০২৫ নভেম্বর ০৬ ১৭:৫৯:৫৭
বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একাংশ। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিনিয়োগকারীরা এই পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্তদের পদত্যাগ ও মার্জার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

মানববন্ধন থেকে আগামী শনিবার (০৮ নভেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। যদি তারা এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ২টায় ওই পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

মানববন্ধনে প্রধানভাবে দাবি জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস যেন মার্জার প্রক্রিয়াটি দ্রুত বন্ধ করেন। বিনিয়োগকারীদের মতে, যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলো মার্জ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুল। তাদের দাবি, যদি মার্জ করতেই হয়, তবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে সিদ্ধান্ত নিক।

তারা হুঁশিয়ারি দেন, দুই দিনের এই সরকার শেয়ারহোল্ডারদের ধ্বংস করে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করলে শেয়ারবাজার আর কখনো বিনিয়োগকারীর আস্থার জায়গায় ফিরতে পারবে না এবং তখন অনেক প্রণোদনা দিয়েও বাজারে কোনো উন্নতি সম্ভব হবে না।

সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, “মার্জারের পুরো প্রক্রিয়াটি বিনিয়োগকারীদের ধ্বংস করতে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ বাংলাদেশে চলে না।”

তিনি আরও বলেন, এই ব্যাংকগুলোকে ভালো তকমা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, কিন্তু ৫ আগস্টের পর এগুলোর দুর্বলতা সামনে এসেছে। ততদিনে উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেছেন, এবং যাদের হাতে শেয়ার আছে, তাদের বেশিরভাগই সাধারণ ও স্বল্প মূলধনী বিনিয়োগকারী। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, যদি তারা বিনিয়োগের কোনো অংশ ফেরত না পায়, তাহলে সারাজীবনের জন্য শেয়ারবাজার ত্যাগ করবে।

সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি সাজ্জাদুল হক বলেন, “এই সরকার অল্প সময়ের জন্য গঠিত হয়েছে। যদি তারা মার্জারের এত বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে যায়, ভুক্তভোগী পরবর্তী সব সরকারকে হতে হবে। আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে দূরে সরে আসুক।” তিনি বলেন, পাঁচ ব্যাংকের হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর শেয়ার শূন্য ঘোষণার পর তারা তিনজনের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছে এবং না করলে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় সারাদেশের বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি পালন হবে।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী, সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি সাজ্জাদুল হক, জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. আজাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক ই ইশতেয়াক এবং সংগঠনের মূখপাত্র মো. মোহসিন বক্তৃতা করেন।

এদিকে, সকালেই ওই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। ফলে শেয়ারবাজারে এখন থেকে ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুই শেয়ারবাজার তাদের ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকবে।

লেনদেন স্থগিত হওয়া ব্যাংকগুলো হলো– ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক। ডিএসই জানিয়েছে, ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ধারা ১৫ অনুসারে ৫ নভেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোকে অকার্যকর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে।

আগের দিন বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন শূন্যের নিচে। শেয়ারগুলোর ভ্যালু জিরো হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কাউকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

এই ব্যাংকগুলোতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানার অংশ উল্লেখযোগ্য: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৬৫ শতাংশের বেশি, এক্সিম ব্যাংকের ৩৯ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৩২ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রায় ৩২ শতাংশ এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে