ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

স্ত্রীর কিডনিতে নতুন জীবন, প্রতিদানে প্রেমিকার হাত ধরলো স্বামী

২০২৫ জুলাই ০৩ ১৩:২২:৪৯
স্ত্রীর কিডনিতে নতুন জীবন, প্রতিদানে প্রেমিকার হাত ধরলো স্বামী

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিকে স্ত্রীর আত্মত্যাগ—অন্যদিকে এক নির্মম প্রতারণা। সাভারের কলমা এলাকায় এমনই একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে একজন স্ত্রী নিজের কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচালেও, সুস্থ হওয়ার পর সেই স্বামীই জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায় ও দ্বিতীয় বিয়েতে।

৩৫ বছর বয়সী উম্মে সাহেদীনা টুনি ২০০৬ সালে মালয়েশিয়া প্রবাসী মো. তারেকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এক বছর পর জন্ম হয় তাদের একমাত্র সন্তান আজমাইন দিব্যের।

২০০৮ সালে তারেকের কিডনির জটিল রোগ ধরা পড়ে—উভয় কিডনিই প্রায় অকেজো। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, নিয়মিত ডায়ালাইসিস ছাড়া বাঁচার উপায় নেই।

পরিবার ও সমাজ যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তখন পাশে ছিলেন শুধু টুনি। স্বামীর চিকিৎসায় নিজের সঞ্চয়, গয়না এমনকি মায়ের পেনশনের টাকাও ব্যয় করেন। ভারতের সিএমসি ও পরে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা চালান।

২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দান করেন টুনি। অস্ত্রোপচার সফল হয়। কিন্তু এরপরই বদলে যেতে থাকেন তারেক।

সুস্থতার পর ঢাকায় ফিরে অনলাইন জুয়া ও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন তারেক। স্ত্রী টুনির উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং থাকতে শুরু করেন ডিভোর্সি প্রেমিকা তাহমিনা মেরির সঙ্গে।

২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাভার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন টুনি। তারেক একদিন পর মুচলেকা দিয়ে অভিযোগ উঠিয়ে ফেলেন। কিন্তু নির্যাতন চলতেই থাকে।

২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ঢাকার একটি আদালতে মামলা করেন টুনি। ২৪ এপ্রিল তারেক গ্রেপ্তার হন এবং ৪ জুন জামিন পান। এরপর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে তারেকের ফোন বন্ধ এবং তার অবস্থান অজ্ঞাত।

টুনির আইনজীবী অ্যাডভোকেট নেহার ফারুক জানান, তারেক শুধু নারী নির্যাতন নয়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনেরও লঙ্ঘন করেছেন। স্ত্রীর কিডনি নিয়ে পরে তাকে নির্যাতন করাটা স্পষ্টতই প্রতারণা। চার্জশিট হাতে পাওয়ার পর জামিন বাতিলের আবেদন করা হবে।

টুনির মা বলেন, “আমার পেনশনের সব টাকা তারেকের চিকিৎসায় খরচ করেছি। আজ সেই ছেলে আমার মেয়েকে বের করে দিল! বিচার চাই।”

প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন, টুনি যেভাবে স্বামীকে আগলে রেখেছেন, তা অকল্পনীয়। অথচ এখন সেই স্বামী তাকে নির্যাতন করে অন্য নারীর সঙ্গে সংসার করছেন।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে