ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

এশিয়ার দ্বিতীয় দুর্বলতম শেয়ারবাজার এখন বাংলাদেশ

২০২৫ জুলাই ০৩ ০৫:৫৮:০৩
এশিয়ার দ্বিতীয় দুর্বলতম শেয়ারবাজার এখন বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে এশিয়ার ফ্রন্টিয়ার মার্কেটগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দ্বিতীয় দুর্বলতম পারফর্মারে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বা ছয় মাসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক হ্রাস পেয়েছে এবং এই সময়ে নতুন কোনো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি।

আলোচ্য সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৭৮ পয়েন্ট বা ৭.২৫ শতাংশ কমে ৪ হাজার৮৩৮-এ নেমে এসেছে। এর পাশাপাশি বাজার মূলধন ৮.১ শতাংশ কমেছে। ব্লু-চিপ ডিএস৩০ সূচক ১২৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮১৬-তে দাঁড়িয়েছে এবং শরীয়াহ-ভিত্তিক ডিএসইএস সূচক ১০৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬১-তে নেমে এসেছে।

প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জটির গড় দৈনিক লেনদেনও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ৩.৮৪ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ কম। গত এক বছরে মূল বাজার বা এসএমই বাজারে একটিও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) তালিকাভুক্ত হয়নি, যা কয়েক দশকে দেখা যায়নি।

বিআরএসি ইএলএল স্টক ব্রোকারেজের মতে, নতুন কমিশন বর্তমানে বাজারের স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলার উপর জোর দিচ্ছে। অতীতের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাই আইপিওকে ততটা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এই পতনের পেছনে বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উচ্চ সুদ হার, কর্পোরেট মুনাফা হ্রাস, চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নেতিবাচক ইক্যুইটির প্রভাব। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, মার্কিন শুল্ক আরোপ এবং ভারত-পাকিস্তান ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মতো বৈশ্বিক বিষয়গুলোও বাংলাদেশের বাজারের অনুভূতিতে প্রভাব ফেলেছে। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতাও একটি বড় কারণ; অন্তত ১০টি ব্যাংকের আর্থিক দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ায় এই খাত ৮.৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ রেকর্ড ৪.২০ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেশি।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত ২০টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূত বা তরল করার পরিকল্পনা করছে। ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা হলো বাজারে পর্যাপ্ত বিনিয়োগযোগ্য ইক্যুইটির অভাব।

তবে এই প্রতিকূলতার মধ্যেও কিছু ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে। বিআরএসি ইএলএল স্টক ব্রোকারেজের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে এবং বাজার-চালিত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পর বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীলতা দেখাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি প্রকাশের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশা জাগাচ্ছে।

অন্যদিকে, মরগান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল (এমএসসিআই) তাদের মে ২০২৫ সালের পর্যালোচনায় বাংলাদেশের বাজারের জন্য কোনো পরিবর্তন আনেনি। অর্থাৎ বাজার এখনও "বিশেষ চিকিৎসার" অধীনে রয়েছে। এর পাশাপাশি, মে মাস পর্যন্ত ২৪টি ডিএসই কোম্পানি এফটিএসই ফ্রন্টিয়ার ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এশিয়ান ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটাল (এএফসি) চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের জন্য একটি ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের উপর ভিত্তি করে এগুতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে ভালো ট্র্যাক রেকর্ডের কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। নতুন কমিশন ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করেছে এবং তালিকাভুক্তির বিষয়ে স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সাথে বৈঠক করেছে। এই পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে বাজারে নতুন কোম্পানি আসার সুযোগ তৈরি করবে এবং এর ফলে একটি প্রাণবন্ত সেকেন্ডারি বাজার গড়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে