ঢাকা, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
Sharenews24

পিনাকির গোপন যাত্রা অবশেষে প্রকাশ্যে

২০২৫ জুন ২৮ ১৬:৩৮:৪৪
পিনাকির গোপন যাত্রা অবশেষে প্রকাশ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আলোচিত ব্লগার ও লেখক পিনাকি ভট্টাচার্যের দেশত্যাগ এবং ফ্রান্সে পৌঁছানোর একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক নিপীড়ন, নিরাপত্তা সংকট এবং একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় কীভাবে তিনি দেশ ছাড়েন—সে প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সাবেক টেলিভিশন সাংবাদিক মুজিবুর রহমান মঞ্জু।

একটি গণমাধ্যমিক আয়োজনে মঞ্জু বলেন, পিনাকির সঙ্গে তার বন্ধুত্বের শুরু শাহবাগ আন্দোলনের সময় থেকে। তবে পরবর্তীতে পিনাকি সেই আন্দোলনের নানা অসঙ্গতি দেখে নিজেকে গুটিয়ে নেন। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে, বিশেষত তখন, যখন পিনাকির লেখালেখির কারণে একটি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়ে যান এবং মঞ্জুর নিজ কর্মস্থল একটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মঞ্জু বলেন, “এক সময় ফ্রান্সভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা FIDH বাংলাদেশে আসে। তাদের স্থানীয় সহযোগীরা আমাদের জানান তারা ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিতে চায়। পিনাকি তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলেন, বাইরে চলাফেরা করতে পারতেন না। ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন সংস্থা তাকে খুঁজছিল।”

FIDH-এর ইন্টারভিউতেই পিনাকি তার পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, জীবিকা সংকটে আছেন, নিরাপত্তাহীনতা চরম পর্যায়ে। তখন সংস্থাটি তাকে জিজ্ঞেস করে তারা কীভাবে তাকে সহায়তা করতে পারে। পিনাকি তাদের বলেন, “আপনারা যদি আমাকে কোনো স্কলারশিপ দেন অথবা এসাইলাম দেন, তাহলে উপকার হয়।” তারা জানতে চায়, তার ফ্রান্সের ভিসা আছে কি না। তিনি জানান, নেই, তবে থাইল্যান্ডের ভিসা আছে।

সেই পরামর্শেই শুরু হয় তার থাইল্যান্ড গমনের পরিকল্পনা। তবে সরাসরি ফ্লাইটে যাত্রা সম্ভব ছিল না। তার নাম ইমিগ্রেশন সার্ভারে ব্লক ছিল। মঞ্জু জানান, “আমরা চেষ্টা করি সার্ভার বন্ধ থাকা অবস্থায় ম্যানুয়ালি তাকে সীমান্ত পার করাতে। এক বন্ধু, যিনি সীমান্তে চাকরি করতেন, আমাদের সহায়তা করেন। অবশেষে পিনাকি সীমান্ত পার হন।”

এই যাত্রার সময় পিনাকির স্ত্রী, যিনি একজন মুসলিম ও পেশায় চিকিৎসক, রোজা রেখেছিলেন এবং উৎকণ্ঠায় ছিলেন। তার মানসিক সান্তনার জন্য মঞ্জু সীমান্ত পার হওয়ার একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও করেন এবং তাকে পাঠান। ভিডিওতে পিনাকিকে নিরাপদে দেখতে পেয়ে স্ত্রী কিছুটা আশ্বস্ত হন।

পিনাকিকে সীমান্ত পার করানো হয়েছিল কুমিল্লা জেলার একটি দুর্গম সীমান্ত দিয়ে। মঞ্জুর ভাষ্যে, “সেই পথ ছিল কাঁচা রাস্তা, ইট-বিছানো এবং অনেকটা গোপনীয়। ওপারে একটি কমার্শিয়াল টিম তাকে গ্রহণ করে বিমানবন্দরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তিনি ব্যাংকক যান এবং পরে ফ্রান্সে পাড়ি জমান।”

মঞ্জু আরও বলেন, “আমরা বন্ধুরা শুধু একজন বিপন্ন মানুষকে সহায়তা করেছি। আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে নিপীড়নের অভিজ্ঞতা থেকে। পিনাকি শুধু একজন লেখক নন, তার পরিবার ছিল সম্মানিত। তার বাবা একজন নামকরা লেখক এবং তাদের পরিবার বগুড়ার জমিদার শ্রেণির। তিনি নিজেও ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন।”

এই অভিজ্ঞতার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক চাপ, রাষ্ট্রের নজরদারি, এবং একটি বন্ধ দরজার পেছনের বহু গল্প, যা কখনো প্রকাশ পায় না। সীমান্ত পেরোনোর মাত্র কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও যেন আজ এক বিরল দলিল হয়ে দাঁড়িয়েছে—একজন লেখকের লড়াই, সাহস এবং দেশত্যাগের জটিল বাস্তবতা তুলে ধরতে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে