ঢাকা, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
Sharenews24

ইউনিয়ন ব্যাংক: গ্রাহকদের অর্থ লোপাটে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

২০২৫ জুন ২৩ ০৯:৪৫:১০
ইউনিয়ন ব্যাংক: গ্রাহকদের অর্থ লোপাটে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্টায়াত্ব প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ব্যাংকের হাটখোলা শাখায় একটি বড় ধরনের আর্থিক জালিয়াতি উন্মোচন হয়েছে। ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে আট কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এক তদন্তে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

জালিয়াতির পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ছিল গ্রাহকদের সম্মতি ছাড়াই সঞ্চয় ও স্থায়ী আমানত হিসাবের বিপরীতে ঋণ তৈরি করা, অ্যাকাউন্ট নকল করা এবং বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মধ্যে তহবিল স্থানান্তর করা।

গত জানুয়ারি মাসে একজন গ্রাহক তার জমা করা তহবিল উত্তোলন করতে গেলে এই কেলেঙ্কারিটি সামনে আসে। তখনই শাখা ব্যবস্থাপকের জালিয়াতি ধরা পড়ে। ইউনিয়ন ব্যাংকের তাৎক্ষণিক অভ্যন্তরীণ তদন্তে শাখা ব্যবস্থাপকের এই বিস্তৃত আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং কেন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে।

জালিয়াতির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক এখনো ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়নি। কমপক্ষে ২০ জন গ্রাহক তাদের আমানত ফেরত পাওয়ার আশায় কয়েক মাস ধরে ব্যাংকের শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কেবল আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, জাকিরের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধার করে গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু অর্থ পরিশোধের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাকির হোসেন হাটখোলা শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এবং ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিনি উভয় সময়েই অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন।

তদন্তে দেখা গেছে, জাকির ভুয়া বিনিয়োগ বা ঋণের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর ও উত্তোলন করেছেন। এছাড়াও, তিনি মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রসিদ (MTDR) ব্লক নকল করে এবং সেগুলোর বিপরীতে ঋণ তৈরি করে তহবিল তুলে নিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি কিছু গ্রাহকের সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তর করে অন্য অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেনের হেরফের ঘটিয়ে ঋণ সমন্বয় করেছেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তদন্তে দেখা যায়, জাকির হাটখোলা শাখার বিভিন্ন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ কোটি ৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একজন মিজানুর রহমান ইউনিয়ন ব্যাংকের হাটখোলা শাখায় মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রসিদের অধীনে দুটি অ্যাকাউন্টে ৬০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন। মুদারাবা হলো ইসলামিক ব্যাংকিং-এর একটি পদ্ধতি, যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তহবিল জমা রাখা হয়।

মিজানুর রহমান বলেন, আমার প্রথম MTDR এর বিপরীতে একটি ঋণ ছিল, যা আমি আগেই পরিশোধ করে দিয়েছিলাম। আমার দ্বিতীয় MTDR এর বিপরীতে কোনো ঋণ ছিল না। কিন্তু গত জানুয়ারিতে আমি দ্বিতীয় MTDR থেকে টাকা উত্তোলন করতে ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কাছে যাই। ব্যবস্থাপক আমাকে আসল MTDR কপি জমা দিতে এবং দুই-তিন দিন পর ফেরত আনতে বলেন। আমি সেই অনুযায়ী আসল MTDR কপি ব্যবস্থাপকের কাছে রেখে আসি।

তিনি আরও বলেন, পরে যখন আমি শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করি, তখন আমাকে জানানো হয় যে, আমার MTDR এর বিপরীতে ৬০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। আমাকে বলা হয়, ঋণ পরিশোধ না করলে ব্যাংক আমার MTDR গ্রহণ করবে না। কিন্তু আমি সেই MTDR এর বিপরীতে ব্যাংক থেকে কখনোই ঋণ নিইনি। এরপর ফেব্রুয়ারিতে জানতে পারলাম, এই ব্যবস্থাপক অনেক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া ঋণ তৈরি করে এবং অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে টাকা তুলে নিয়েছেন।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, "তারপর থেকে ব্যাংকের শাখা, প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বিভিন্ন পর্যায়ে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও আমি আমার টাকা ফেরত পাইনি।"

ঢাকার সাভারে জুতা তৈরির কারখানা রয়েছে এবং স্থানীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য জুতা তৈরি করেন মিজানুর। তিনি জানান, মূলধনের অভাবে তিনি সময়মতো অনেক অর্ডার সরবরাহ করতে পারছেন না।

গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো ইউনিয়ন ব্যাংকও মূলধন সংকটের মুখে পড়ে। ব্যাংকটি কয়েক মাস ধরে বড় গ্রাহক আমানত পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ইউনিয়ন ব্যাংক সহ পাঁচটি ইসলামিক ব্যাংককে শিগগিরই একটি একক সত্তায় একীভূত করা হবে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে