ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

আওয়ামী লীগ নয় এবার ভারতের ভরসা বিএনপি

২০২৫ এপ্রিল ১৫ ১১:৪০:৩৫
আওয়ামী লীগ নয় এবার ভারতের ভরসা বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরে ধারণা প্রচলিত ছিল, ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে একমাত্র আওয়ামী লীগকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে—এমনকি একে অনেকে বলতেন, "সব ডিম একটি ঝুড়িতে রাখা" কৌশল। অপরদিকে, বিএনপির প্রতি ভারত বরাবরই অবিশ্বাস দেখিয়ে এসেছে—তাদের শাসনকাল ভারতের জন্য সুখকর ছিল না, এমন অভিযোগও উঠে এসেছে দিল্লির কূটনৈতিক মহলে।

কিন্তু সময় বদলেছে, বদলেছে বাস্তবতা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যে নাটকীয় রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে, তা ভারতকেও নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই কোণঠাসা, আর বিএনপি ক্রমেই সম্ভাব্য ক্ষমতাসীন দলের রূপ নিচ্ছে। এমতাবস্থায়, ভারতের চোখে বিএনপির গুরুত্ব বাড়ছে বলেই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কখনোই উষ্ণ ছিল না। ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ভারতকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। অস্ত্র পাচার, চরমপন্থার বিস্তার—এসবই সেই সময়ের স্মৃতি।

ভারতের সাবেক কূটনীতিক রিভা গাঙ্গুলি দাসের ভাষায়, অতীতের সেই সময়কাল ভারতের নিরাপত্তার দিক থেকে ছিল "চরম উদ্বেগের"। সেই ‘রেকর্ড’ ভারত কখনোই ভুলে যায়নি।

বর্তমান বাস্তবতায় ভারতের জন্য আবার নতুন করে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ভাবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কারণ:

আওয়ামী লীগ এখন দুর্বল অবস্থানে।

বিএনপি শক্তিশালী বিরোধী শক্তি হিসেবে সংগঠিত হচ্ছে।

ভারতের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষায় বিএনপিও আগ্রহী বার্তা দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বিএনপি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগগুলোকে স্বীকার করে এবং প্রয়োজনীয় আশ্বাস দেয়, তাহলে ভারতের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরিতে বাধা নেই।

ভারতের বিজেপি নেতৃত্ব এখন স্পষ্ট করে বলছে—বাংলাদেশে যে দলই আসুক, তাদের প্রধান শর্ত হবে:

হিন্দু সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা

ভারত জামায়াতকে ‘তালেবানি চিন্তাধারার ধারক’ হিসেবে দেখে এবং এটিকে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করে। বিএনপি যদি এ বিষয়ে পরিষ্কার অবস্থান নেয়, তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বড় সুযোগ তৈরি হবে।

ভারতের নীতি এখন অনেকটাই বাস্তববাদী ও কূটনৈতিকভাবে সাবধানী। দিল্লির কূটনৈতিক মহল বারবার বলছে—নির্বাচনের আগে তারা প্রকাশ্যে কোনো দলকে সমর্থন করবে না। কারণ, তাতে ভারতের ‘বিগ ব্রাদার’ ইমেজ তৈরি হবে, যা আন্তর্জাতিকভাবে অস্বস্তিকর।

তবে নির্বাচনোত্তর সরকার যে-ই আসুক, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাই তাদের কৌশল। নির্বাচনে জিতলে বিএনপির সঙ্গেও একটি ‘ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ’ গড়ে তুলতে ভারত প্রস্তুত থাকবে।

ভারত-বিরোধিতা নয়, বাস্তবনীতি: বিএনপিকে ভারতের প্রতি নিজেদের নীতিগত অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। শুধুই প্রতিবাদ নয়, বরং গঠনমূলক ও সমমর্যাদার সম্পর্কের বার্তা দিতে হবে।

জামায়াত থেকে দূরত্ব: ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাইলে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ এখন প্রায় অবধারিত শর্ত।

নিরাপত্তা বিষয়ে আশ্বাস: ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তার উদ্বেগগুলোকে সম্মান জানিয়ে প্রয়োজনে নতুন প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে। ভারতও এখন কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। তারা চায় না কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে একচেটিয়া সম্পর্ক থাকুক। বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সরকার যেই হোক, ভারতের স্বার্থ রক্ষা করলেই তারা সম্পর্ক তৈরি করতে প্রস্তুত।

বিএনপি যদি বাস্তববাদী কূটনীতি গ্রহণ করে এবং অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, তাহলে ভারতের সঙ্গে তাদের দীর্ঘমেয়াদি ও অর্থবহ সম্পর্ক তৈরি হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে