ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ভারতে জামাই আদরে হাসিনার আস্থাভাজনরা

২০২৪ অক্টোবর ০৩ ১২:১৫:৩২
ভারতে জামাই আদরে হাসিনার আস্থাভাজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ১৬ বছরে বেশি সময় ক্ষমতার মসনদে থেকে অবশেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে প্রাণ রক্ষা করে শেখ হাসিনা। শুধু শেখ হাসিনাই নয়, হাসিনা সরকারের সাবেক প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী, এমপি, আমলা এবং দলীয় নেতাকর্মীয় জামাই আদরে ভারতে অবস্থান করছেন।

হাসিনা সরকারের পতনের পর দালালদের বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড় হয়ে তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন তারা। এদের প্রায় সকলেই বাংলাদেশে কয়েকটি করে খুনের মামলায় অভিযুক্ত আসামী। এদের কেউ কেউ দল বেঁধে আবার কেউ একটা বাসাভাড়া নিয়ে বা হোটেলে অবস্থান করছেন।

তবে সাবেক সরকারের বেশি কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি, আমলা এবং দলীয় নেতাকর্মী সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় বাংলাদেশের বিজিবি ও সাধারণ জনতার হাতে ধরা পড়েছেন। একজন নেতা সীমান্ত দিয়ে পালাতে গিয়ে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপি ছিলেন এমন কয়েকজন খুনিকে গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার একটি পার্কে ঘুরতে দেখা গেছে। আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ছিলেন সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি অপু উকিল ও এমপি হাজী সেলিমের ছেলে ঢাকা-৭ এর সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি কয়েকটি খুনের মামলার আসামী শামীম ওসমান সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান। কিছুদিন আগে তাকে দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে দেখা গেছে। শামীম ওসমান দালালদের সহায়তায় রাতের আঁধারে বোরকা পরে ভারতে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে দিল্লি অবস্থান করছেন।

দালালদের সহায়তায় গত ৮ সেপ্টেম্বর সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া দালালদের সহায়তায় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তারা বারাসাত এলাকায় চট্টগ্রামের জন্ম নেওয়া ভারতীয় নাগরিক জনৈক জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ভারতে চিকিৎসাধীন বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বিদ্যুৎ বড়ুয়া সেখানে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন।

পুলিশের বিতর্কিত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। তিনি দালালদের এ জন্য মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে।

সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবৈধ পথে দালালদের মাধ্যমে টাকার বিনিমযে ভারত পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি অন্য দেশে চলে গেছেন বলে সুত্রের দাবি।

কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা ১ সেপ্টেম্বর ভারতে পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার সময় বাবা ও মেয়ে বোরকা পরিহিত ছিলেন। তারা রাতের আধারে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার চরানল সীমান্ত দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পৌঁছান। বর্তমানে বাবা-মেয়ে কলকাতায় এক রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে রয়েছেন।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ভারতের আসামে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন বাংলাদেশী পর্যটকরা।

দালালদের মাধ্যমে ভারতে পালাতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েছেন বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় বিজিবি’র হাতে ধরা পড়েন।

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি জান্নাত আরা হেনরিসহ আরো কয়েকজন সাবেক এমপি ও বিতর্কিত নেতা সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়েন।

ছাত্র লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না ভারতে পালাতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। অবশ্য পান্নার পরিবার থেকে দাবি করা হয় মেঘালয়ের পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে একাধিকবার পালাতে গিয়ে ব্যর্থ হন।

সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকও সিলেটের একটি সীমান্ত দিয়ে পালাতে চেস্টা করে ব্যর্থ হন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা ভারতে পারিয়ে গেছেন। অনেকে পালানোর সময় ধরা পড়েছেন।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা, শেরপুর, লালমনিরন হাট, সিলেট, ময়মনসিংহ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, খুলনার সুন্দরবনসহ কয়েকটি জেলার সীমান্ত মানব পাচারের জন্য দালালচক্রের স্বগরাজ্যে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত এবং বিভিন্ন খুনের মামলার আসামী নেতারা টাকার বিনিময়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছেন এ সব সীমান্ত দিয়ে।

দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের খুনিরা ভারতে প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ দুই দেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি আনুযায়ী সেটা করতে পারেন না। তাদের গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল। অন্যদিকে ভারতে খুনিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে অপরাধীরা পালাচ্ছে তারপরও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা নীরব। অথচ ভারতের সরকারের চোখে কোনো অপরাধীকে বাংলাদেশে প্রকাশ্যে দেখা গেলে ভারতের মন্ত্রীরা কঠোরভাবে প্রতিবাদ করে সেই অপরাধীকে ফেরত দিতে চাপ প্রয়োগ করতেন।

এস/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে