ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ‘হলিডে ইন’র মালিক পলাতক

২০২৪ অক্টোবর ০৩ ০৭:১০:০০
দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ‘হলিডে ইন’র মালিক পলাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক: আলম আহমেদ বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা। তিনি সরকারি-বেসরকারি অর্ধডজন ব্যাংক থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। এর বড় একটি অংশ দিয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গড়ে তুলেছেন পাঁচ তারকা হোটেল, যেটি ‘হলিডে ইন’ নামে পরিচিত।

গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এর আলম আহমেদও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে হলিডে ইন। এছাড়া আলম আহমেদ আগে থেকেই খেলাপি হওয়ায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে ব্যাংক ঋণ আদায়ও।

আলম আহমেদের মালিকানাধীন হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ব্যাংকের ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নামে ৪৮৩ কোটি ও ব্যক্তিগত ঋণ রয়েছে ১৫৪ কোটি টাকার।

জানা গেছে, জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রাষ্ট্রায়াত্ত জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি ব্যাংক থেকে এসব ঋণ নিয়েছেন তিনি। কৃষক লীগের এ নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় ঋণ আদায়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ব্যাংকগুলো।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ বের করার ক্ষেত্রে আলম আহমেদ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশও ছিল। জনতা ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে নিয়েছিলেন জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়। ব্যাংক থেকে ঋণ ছাড় করার পর একটি কিস্তিও পরিশোধ করেননি তিনি।

আলম আহমেদ ‘মরিয়ম গ্রুপ’ নামে একটি ব্যবসায়িক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গ্রুপটির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, মরিয়ম কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি ও নির্মাণ খাতের একটি কোম্পানি রয়েছে তাদের। আর এনপিএম অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে কাপাসিয়ায় একটি গার্মেন্টও রয়েছে আলম আহমেদের। হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনালকে নিজেদের সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেছে মরিয়ম গ্রুপ।

একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের একটি অংশ বিদেশে পাচার করেছেন আলম আহমেদ। পাচারকৃত অর্থে যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ডে বাড়ি-গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলেছেন। হাবিব হোটেল ছাড়া দেশে তার কোনো ব্যবসাই সচল নেই।

কৃষক লীগের এ নেতার বিদেশে ব্যবসার ঠিকানা মরিয়ম গ্রুপের ওয়েবসাইটেও উল্লেখ রয়েছে। গ্রুপটির লন্ডন অফিসের ঠিকানা, ‘মরিয়ম বেঙ্গল, ১০, প্রিটোরিয়া রোড, লন্ডন, ই-১১৪বিডি, যুক্তরাজ্য’। আর ব্যাংকক অফিসের ঠিকানা দেয়া হয়েছে, ‘সার্কেল কনডো-২, ৩৬ ওল্ড পেচাবুরি রোড, মাকাসান ব্যাংকক, থাইল্যান্ড’।

হাবিব হোটেলসহ আলম আহমেদের কোম্পানিগুলোকে দেয়া সব ঋণ বিতরণেই অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে ব্যাংকগুলো। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান থেকেই আপত্তি উঠেছে।

এছাড়া, রাজধানীর হাতিরঝিলের পশ্চিম পাশে হাবিব হোটেল নির্মাণের সময় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২-এর ৩/১২ ধারাও ভঙ্গ করেছেন আলম আহমেদ।

ন্যাশনাল ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, হাবিব হোটেলসহ মরিয়ম কনস্ট্রাকশনের নামে ব্যাংকটির ঋণ স্থিতি এখন ৪৭৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ঋণের পুরো অর্থই অনেক আগে থেকে খেলাপি। এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে জামানত থাকা সম্পদের মূল্যমান ২২০ কোটি টাকা। আলম আহমেদের সঙ্গে ব্যাংকের কোনো যোগাযোগ নেই। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই কৃষক লীগ নেতা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন বলে শুনেছি।

এদিকে, সরকার পতনের পর ‘হলিডে ইন’-এর ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। গ্রাহক না থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে যার মতো অলস সময় কাটাচ্ছেন। হোটেলের পরিস্থিতি জানতে চাইলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে একজন কর্মচারী বলেন, ‘রুমে অতিথি নেই বললেই চলে। আর রেস্টুরেন্টে খেতে আসেন, এমন গ্রাহকের সংখ্যাও একেবারে নগণ্য। তেমন কোনো কার্যক্রম না থাকায় চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের এরই মধ্যে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আবার যারা কাজ করছেন তারাও ঠিকমতো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।’

হলিডে ইনের মার্কেটিং কমিউনিকেশন ম্যানেজার মানফুজা মাসুদ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘দেশের কোনো পাঁচ তারকা হোটেলের পরিস্থিতিই এখন ভালো নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বিদেশীরা কম আসছেন। এতে হোটেলে রুমের বরাদ্দ কমেছে। তবে রেস্টুরেন্টসহ আনুষঙ্গিক সেবাগুলো ভালো চলছে। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।’

মামুন/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে