ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

শেয়ারবাজারের কারসাজিতেও সাকিব আল হাসান অল রাউন্ডার

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৬ ০৬:৩৭:৩৫
শেয়ারবাজারের কারসাজিতেও সাকিব আল হাসান অল রাউন্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্রিকেট অঙ্গনে অনবদ্য পারফর্মেন্সের জন্য সাকিব আল হাসান অল রাউন্ডারের খ্যাতি অর্জন করেছেন। তবে দেশের শেয়ারবাজারেও অলরাউন্ডারের খ্যাতিতে পিছিয়ে নেই। শেয়ারবাজারেও তিনি কারসাজির বরপুত্রের উপাধি পেয়েছেন। ক্রিকেটে যেমন শত কোটি টাকা আয় করেছেন, শেয়ারবাজার থেকেও তিনি শত কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।

শেয়ারবাজারে সাকিব আল হাসানের আনুষ্ঠানিক পদার্পন হয় ২০১৭ সালে। সেই বছর তিনি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির শুভেচ্ছাদূত হন। শেয়ারবাজারে ক্রিকেটারদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো আইনি বিধিনিষেধ বা নৈতিক বাধা থাকলেও সাকিব আল হাসানের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে শেয়ারবাজারের আলোচিত-সমালোচিত বিনিয়োগকারী ও সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক আবুল খায়ের হিরুর মাধ্যমে বিনিয়োগ করা ও কারসাজির কারণে আলোচনার শীর্ষে থাকা কোম্পানিতে বিনিয়োগ তাকে এ বিতর্কের অংশ করেছে। স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্তেও সন্দেহজনক লেনদেনে তার নাম জড়িয়ে যায়।

যদিও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের আনুকূল্য তাকে শেয়ার কারসাজির কারণে শাস্তি পাওয়া থেকে সুরক্ষা দিয়েছে। সেই সময় সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে শেয়ার কারসাজির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়নি বলে সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যদিও তদন্তে কারসাজির সুস্পষ্ট প্রমাণ ছিল।

চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিবর্তন আসে বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ে। সংস্থাটির নতুন নেতৃত্ব অতীতের অনিয়ম ও কারসাজি ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ আগস্ট সংস্থাটির শুভেচ্ছাদূতের পদ থেকে সাকিব আল হাসানকে সরিয়ে দেয় বিএসইসি। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিএসইসির কমিশন সভায় ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট থেকে একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সময়ে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

একই ঘটনায় তার সঙ্গে শেয়ারবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরুকে ২৫ লাখ টাকা, হিরুর পিতা আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ টাকা, সাকিব ও হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে ১ লাখ টাকা, হিরুর প্রতিষ্ঠান লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজকে ১ লাখ টাকা, ইশাল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে ৭৫ লাখ টাকা এবং মো. জাহিদ কামালকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সব মিলিয়ে চার ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে শেয়ার কারসাজির দায়ে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ছাড়াও আরো পাঁচ কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম এসেছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন নিয়ে তদন্ত করেছিল ডিএসই। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়িয়েছিল। সে সময়ে যারা কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেছিলেন তাদের মধ্যে সাকিব আল হাসানও ছিলেন। তিনি কোম্পানিটির ৮ লাখ ২০ হাজার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছিলেন ২ লাখ শেয়ার। এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির কারণে বিএসইসি দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভ লিমিটেডকে ৭২ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। আবুল খায়ের হিরু এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

পরের বছর ২০২১ সালের ৫ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ারদর ১২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩৩ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছিল। এ সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন নিয়ে তদন্ত করে ডিএসই। তদন্তে ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার লেনদেনকারীর তালিকায় সাকিব আল হাসানের নাম উঠে আসে। ব্যাংকটির শেয়ার কারসাজির কারণে বিএসইসি কনিকা আফরোজ ও তার সহযোগীদের ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করে। কনিকা আফরোজ আবুল খায়ের হিরুর বোন।

২০২১ সালে শেয়ারবাজারে আরও একটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বড় কারসাজি হয়। ওই বছরের ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত বহুল আলোচিত ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন নিয়ে আরেকটি তদন্ত করে ডিএসই। এ তদন্ত প্রতিবেদন বিএসইসির কাছেও পাঠিয়েছিল এক্সচেঞ্জটি। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএসইসি হিরুর পিতা আবুল কালাম মাতবর ও তার সহযোগীদের দেড় কোটি টাকা জরিমানা করে। এ তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, যারা কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেছিলেন, তাদের মধ্যে সাকিব আল হাসানের নামও ছিল। তিনি কোম্পানিটির ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৩টি শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ২৪৩টি।

২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ারদর ছিল ১২ টাকা ৬০ পয়সা। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তা দাঁড়ায় ২০ টাকা ১০ পয়সায়। ব্যাংকটির ওই সময়কার শেয়ার লেনদেন নিয়ে তদন্ত চালিয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেনকারীদের তালিকায় আবারো সাকিব আল হাসানের নাম উঠে আসে। তিনি এ সময়ে ব্যাংকটির ৭৫ লাখ ১ হাজার ৬৭৬টি শেয়ার কেনার বিপরীতে ১০ লাখ ২০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছিলেন। ব্যাংকটির শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার কারণে বিএসইসি আবুল কালাম মাতবর ও তার সহযোগীদের ৩ কোটি টাকা জরিমানা করে।

এছাড়া ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়েও বড় কারসাজি হয়েছে। শেয়ারটির কারসাজিতে সহযোগিতায় রাষ্ট্রায়াত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির নামও জড়িয়ে যায়। ডেল্টা লাইফের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেছেন সাকিব আল হাসান। স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্তে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজিতে সাকিবের নামও উঠে আসে।

এরপর ২০২২ সালে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার নিয়েও কারসাজি হয়েছে। ওই বছরের ২৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ছিল ৩৪ টাকা। একই বছরের ২৪ এপ্রিল এর দর বেড়ে ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়ায়। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন নিয়ে ডিএসই তদন্ত করেছিল। আলোচ্য সময়ে সাকিব আল হাসান আইপিডিসির ১১ লাখ শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছিলেন ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৩টি শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কারসাজির জন্য বিএসইসি আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে।

এর বাইরেও আরো বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারের কারসাজিতে সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততার অনেক প্রমাণ থাকলেও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কারণে সে সময় এসব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হয়নি, বরং হিরু ও সাকিবদের শেয়ারবাজারে কারসাজিতে উৎসাহ জোগানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে