ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

রেসের ৬ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ‘নো ডিভিডেন্ড’, কিন্তু কেন?

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৬ ০৯:১৮:১০
রেসের ৬ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ‘নো ডিভিডেন্ড’, কিন্তু কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেস (RACE) মোট ১২টি ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করছে। এরমধ্যে ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ইউনিট হোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচ্য অর্থবছরের ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডই ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে।

ফান্ডগুলো হলো-ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ট্রাস্ট ব্যাংক ১ম মিউচুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ব্যাংক ১ম মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, এবং এক্সিম ব্যাংক ১ম মিউচুয়াল ফান্ড।

আলোচ্য অর্থবছরে ফান্ডগুলো লোকসানের কবলে পড়েছে। যে কারণে ফান্ডগুলোর ইউনিট হোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়নি।

রেস জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই ৬ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৩৫০ কোটি টাকা লোকসান করেছে।

এই ৬ ফান্ডের ইউনিট বর্তমানে ৫ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। ফান্ডগুলোর অভিহিত মূল্য ১০ টাকা।

রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান তাহের ইমাম সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত তিন বছরে এই ৬ ফান্ড বিনিয়োগকারীদের ৫২২ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তবে সর্বশেষ অর্থবছরে ফান্ডগুলো লোকসানে পড়েছে বিধায় কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি।

হাসান তাহের ইমাম ব্যাখ্যা করে বলেন, জানুয়ারিতে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর ডিএসইর মূল সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২৫ শতাংশ কমে গেছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোতে ফান্ডামেন্টাল শেয়ার রয়েছে। ফান্ডামেন্টাল শেয়ার জাঙ্ক শেয়ারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পতনের সম্মুখীন হয়েছে৷ যে কারণে ফান্ডগুলো বড় আকারে লোকসানের কবলে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা সবসময় ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করি, তাই এই পতনের কারণে আমাদের ব্যাপক লোকসান হয়েছে।’

এদিকে, গত জুনে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের সমস্ত তফসিলি ব্যাংককে রেস দ্বারা পরিচালিত ১২টি মিউচুয়াল ফান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাংকিং লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই তহবিলের বিও (বেনিফিশিয়ারি মালিকদের) অ্যাকাউন্টগুলিও ব্লক করে দিয়েছে।

এই বিষয়ে হাসান তাহের ইমাম বলেন, একজন ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের পর শিবলী রুবায়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন এবং বিএফআইইউ তাদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে। কিন্তু ব্লক করা অ্যাকাউন্টগুলি রেস এর অ্যাকাউন্ট নয়, সেগুলি বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্ট। ফান্ডগুলোর অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়ার কারণে আমরা ফান্ডগুলোর পোর্টফোলি-তে সময়মতো প্রপিট তুলতে পারছি না।

এর আগে চৌধুরী নাফিজ সারাফত এবং হাসান তাহের ইমাম ২০০৪ সালে রেস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল-এর লাইসেন্স পান।

চৌধুরী নাফিজ সারাফাত রেস-এর প্রায় ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক এবং বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির একজন পরিচালক। এক সময়ে তিনিই ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির হর্তাকর্তা। আর হাসান তাহের ইমাম ছিলেন তার দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রধানতম দোসর। তারা দুজনই মিলেমিশে ফান্ডগুলোর তহবিল নিজেদের খেয়াল খুশীমতো ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা নিজেরা ভোগ করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, রেস-এর পরিচালনাধীন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা লোকসানের ভারে নিঃস্ব হতে চললেও চৌধুরী নাফিজ সারাফাত ও হাসান তাহের ইমাম মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ব্যবস্থাপনা থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আঙ্গল ফুলে তাদের কলাগাছ হওয়ার পেছনে রয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর অর্থ তারা বরাবরই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। ক্ষমতার দাপটের কারণে কেউ কোনদিন তাদের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘টু শব্দ’ পর্যন্ত করতে পারেননি।

২০০৯ সালে চৌধুরী নাফিজ সারাফাত এবং হাসান তাহের ইমাম রেস পরিচালিত মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তহবিল ব্যবহার করে ফারমার্স ব্যাংকে (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার স্পনসর শেয়ার কিনেছেন।

ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, ফার্স্ট জনতা এবং পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি হিসেবে চৌধুরী নাফিজ সারাফাত এবং ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট, ইবিএল ফার্স্ট, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট, পিএইচপি ফার্স্ট, ইবিএল এনআরবি এবং এবি ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে হাসান তাহের ইমাম ফারমার্স ব্যাংকের বোর্ডে পরিচালক হন।

এরপর ফার্মার্স ব্যাংক ২০১৭ সালে ধসে পড়ে। এরপর ব্যাংকটির পেছনে যারা ছিলেন, তাদের ক্ষমতার কাছে পরাজিত হয়ে ব্যাংকটি বন্ধ করার পরিবর্তে, সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে ইকুইটি সহায়তা প্রদান করে। পরবর্তীকালে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক রাখা হয় এবং চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে এর বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়।

তবে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের নেতৃত্বে ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হয়নি। চলমান আর্থিক সংকটের কারণে ব্যাংকটি এখন আমানতকারীদের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। চৌধুরী নাফিজ সরাফাত চলতি বছরের জানুয়ারিতে পদ্মা ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করেন, এরপর হাসান তাহের ইমাম হন। তারপর ব্যাংকটির অবস্থা আরও নাজুক অবস্থায় পড়ে।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে