ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ঘরে-বাইরে কোথাও সম্মান পান না প্রবাসীরা

২০২৪ মে ০১ ২০:০৩:১৫
ঘরে-বাইরে কোথাও সম্মান পান না প্রবাসীরা

প্রবাস ডেস্ক : অনেক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা নিয়ে পরিবারের স্বাচ্ছন্দ এবং নিজের ভবিষ্যতের কল্যাণে বাংলাদেশের পরিশ্রমী তরুণরা বিদেশ পাড়ি দেয়। পরিবারকে ভালো রাখতে বেশিরভাগ তরুণরা ঋণ করে বিদেশ বিভুইয়ে যায়। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার পর তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। স্বপ্ন ও প্রত্যাশার জায়গায় স্থান করে নেয় বেদনার গাংচিল।

মালয়েশিয়ার গিয়েছেন কুমিল্লার আবদুর রহিম। যেই প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিলেন, বাস্তবে তার উল্টো হয়েছে। সেখানে প্রতিটি পদে তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বাঙালি শুনলে অন্য দেশের কর্মীরা করুণার চোখে দেখে। যে আদম ব্যাপারি মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার সময় যে কাজের কথা বলেছিল, যে বেতনের কথা বলেছিল; যাওয়ার পর দেখেন কাজ ও বেতন তার ধারে-কাছেও নেই। সেখানে যাওয়ার পর আদম ব্যাপারিকে ফোন করলে ফোন ধরে না। ধরলেও বলে কিছুদিন ধৈর্য্য ধরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেই কিছুদিন সপ্তাহ যায়, মাস যায়, বছরও পেরিয়ে যায়, আবদুর রহিমের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না।

সৌদি আরব গিয়েছেন হাফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অন্য দেশের শ্রমিকের তুলনায় আমাদের পারিশ্রমিক খুবই কম। কিন্তু আমাদের ব্যয় সবচেয়ে বেশি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা প্রতারণারও শিকার হই। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাই না। আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলা হলেও মূল্যায়ন করা হয় না। জানা গেছে, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাদের প্রবাসজীবন মোটেও আরামদায়ক নয়। তারা ঘরে-বাইরে কোথাও সম্মান পান না।

বিদেশের প্রতিটি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দেশটিতে চাকুরীরত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করার কথা। কিন্তু প্রবাসীদের তুলনায় সেখানে কর্মরত কর্মকর্তাদের সংখ্যা অনেক কম। এছাড়া, তারা প্রভাবশালী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের কিছুটা সাহায্য-সহযোগিতা করলেও সাধারণদের দিকে তেমন সুপ্রসন্ন হন না। এমন অনেক প্রবাসী দূতবাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগের তীরও ছোড়েন। তারপরও নিজেদের অভাব-অভিযোগ উপস্থাপন করার নিজেদের একটা জায়গাতো আছে-এটাই প্রবাসীদের বড় সান্তনা।

অথচ এই প্রবাসীরাই বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় অংশীদার। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ওপরই নির্ভরশীল। তারা দেশের জন্য নিরন্তর ঘাম ঝরাচ্ছেন। নিজের আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিচ্ছেন। অথচ দেশে-বিদেশে তাদের সুখ আর নিরাপত্তার কোনো বালাই নেই। যার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় বিদেশে নানা রকম বঞ্চনা, বিমানবন্দরে হয়রানি, লাগেজ উধাও! জমি নিয়ে প্রতারণা, সামাজিক কোন্দলসহ নানা বঞ্চনার চিত্র।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার প্রবাসীদের কল্যাণ ও তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রবাসী কল্যাণ শাখা প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রবাসীরা হয়রানির শিকার হলে এই শাখার মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যে সব প্রবাসী বিদেশে মারা যান, তাদের উত্তরাধিকারীরা যাতে সহজে আর্থিক সুবিধা পান, সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ শাখা তা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু এখানেও প্রবাসীদের কল্যাণের কথা যেভাবে প্রচার করা হয়, প্রবাসীরা কল্যাণ আসলে সেভাবে পান না।

এই বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শিগগির প্রবাসী কল্যাণ সেল গঠন করা হবে। দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে ট্রেনিং সেন্টার বাড়ানো হবে। আমরা নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে কাজ করছি। তখন প্রবাসী শ্রমিকদের সংকট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

শেয়ারনিউজ, ০১ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে