ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

জাল দলিলে প্রবাসীর সম্পত্তি দখল

২০২৪ এপ্রিল ২৮ ১০:০২:১৭
জাল দলিলে প্রবাসীর সম্পত্তি দখল

নিজস্ব প্রতিবেদক : আলাউদ্দিন আহমেদ হারুন জীবনের দীর্ঘ সময় জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বড় ভাই কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যৌথভাবে আড়াই কাঠা জমি কিনেছেন তিনি। দুই জনের অর্থায়নে সেখানে একটি বহুতল বাড়িও তৈরি করা হয়।

তবে এক যুগ পর ২০২৩ সালে দেশে ফিরে আলাউদ্দিন দেখেন, পুরো বাড়ির মালিকই তাঁর বড় ভাই। তিনিই নাকি হেবা দলিল (দানপত্র) করে ভাইকে জমি-বাড়ি দিয়েছেন! কাগজপত্রও সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।

জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন আলাউদ্দিন। তদন্তে বেরিয়ে আসে, কৌশলে ভুয়া দলিল বানিয়ে পুরো সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছেন কামাল।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সম্প্রতি এ মামলার তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংস্থাটির বিশেষায়িত তদন্ত ও অভিযান (সংঘবদ্ধ অপরাধ-দক্ষিণ) শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান গণমাধ্যমকে জানান, তদন্তে জাল দলিল তৈরির বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। বিবাদী তাঁর আপন ভাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

সূত্র জানায়, খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকায় রিয়াজবাগের আড়াই কাঠা প্লটের (নম্বর প-৮) মালিক দুই ভাই। দু’জনের ভাগ সমান হলেও বড় ভাই কামাল ছোট ভাইয়ের জমিসহ ভবনের মালিক সেজে বসেছিলেন।

এ ক্ষেত্রে তিনি একটি হেবা দলিল উপস্থাপন করেন, যা ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রির দাবি করা হয়। রেজিস্ট্রি নম্বর ১৩১৬৯। তদন্তকালে হেবাবিষয়ক ঘোষণাপত্র দলিলটির সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য খিলগাঁও সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করা হয়।

এর পর গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর পাঠানো চিঠিতে সাব-রেজিস্ট্রার এ এম শফিউল বারী জানান, ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেজিস্ট্রি করা সর্বশেষ দলিল নম্বর ছিল ১২৬৫০। অতএব কথিত ওই হেবা দলিল সেখানে রেজিস্ট্রি হয়নি। ফলে এর ভিত্তিতে করা নামজারিও বৈধ নয়।

তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সংঘবদ্ধ অপরাধ-দক্ষিণ শাখার এসআই সুহৃদ দে জানান, যৌথ মালিকানার জমিতে আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং সেটির ফ্ল্যাটের মালিকানাসহ অন্যান্য সুবিধার বিষয়ে শরিকানা চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর দুই ভাইয়ের বিনিয়োগে শুরু হয় ছয় তলা ভবন নির্মাণ।

তবে মামলার বাদী আলাউদ্দিন বিদেশে থাকায় শুরু থেকেই ভবনের তদারকি করেন কামাল। তাঁর ভাই বিদেশ থেকে নির্মাণ বাবদ প্রয়োজনীয় টাকা পাঠাতেন। ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দুই ভাই ২২ লাখ করে মোট ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নেন।

ঋণ নেওয়ার সময় দুই ভাইয়ের মধ্যে আলোচনা হয়, আলাউদ্দিনের ঋণের কিস্তির টাকা তাঁর মালিকানার ফ্ল্যাটের ভাড়া থেকে পরিশোধ হবে। এর ধারাবাহিকতায় ভবন নির্মাণ শেষ হলে তাঁর ফ্ল্যাটের ভাড়া থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়।

এদিকে কামাল জমিসহ ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখা থেকে নিজের নামে ৬৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। একক নামে ঋণ নেওয়া, ফ্ল্যাট থেকে আদায় করা ভাড়ার হিসাব না দেওয়া নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর বিরোধের সূত্রপাত হয়।

এসআই সুহৃদ জানান, ভুয়া নামজারির বিষয়টি জানতে পেরে আলাউদ্দিন তাঁর শ্বশুর এ বি এম হাবিবউল্লাহকে আপস-মীমাংসার জন্য কামালের সঙ্গে আলোচনায় বসার অনুরোধ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে হাবিবউল্লাহ গত বছরের ২৩ মে রামপুরা থানায় আপস বৈঠক করেন। তখন কামাল সব শর্ত মেনে আপসনামায় সই করেন। কিন্তু কামাল কোনো শর্ত মানেননি। উল্টো বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আরও টাকা দাবি করেন।

সার্বিক তদন্তে দেখা যায়, ভুক্তভোগী সহোদর ভাই আলাউদ্দিনকে ভাড়ার টাকা ও সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে না দিয়ে, জাল কাগজপত্র ঠিক না করে এবং মামলার বাদী ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের মিথ্যা মামলার হুমকি দেওয়ার সত্যতা মিলেছে।

শেয়ারনিউজ, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে