ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

ভুয়া এনআইডিতে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!

২০২৪ এপ্রিল ০৭ ১১:০৪:১২
ভুয়া এনআইডিতে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক :ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকা জালিয়াতিকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর পুলিশ (ডিবি)।

শুক্রবার (০৬ এপ্রিল) মিরপুর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস (৪২), নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী পল্লব দাস (৩৬), রফিকুল ইসলাম খান (৩৮) ও আলিফ হোসেন (২০)।

ডিবি জানায়, জাল কাগজপত্র ও এনআইডি ব্যবহার করে আরও ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল চক্রের মূলহোতা জয়নালের। এরপর পরিবার নিয়ে বিদেশে পালানোর পরিকল্পনা ছিল তার।

আর পল্লব দাস রংপুরের এনআইডি সার্ভারে আউটসোর্সিংয়ে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। এক্ষেত্রে পল্লব সার্ভারে ঢুকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে এনআইডি কার্ড তৈরি করে জয়নালকে সরবরাহ করতেন। যেসব দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন জয়নাল।

শনিবার রাজধানীর মিন্টু রোডের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবি প্রধান বলেন, এই প্রতারক জয়নালের এক সময় কিছুই ছিল না। তিনি ইমিটেশন পণ্যের দোকানি ছিলেন। ব্যবসায় লস করে তিনি প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। জয়নাল তার প্রতারণার জন্য একটি কোম্পানি খুলে আরো সাতটি কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিলেন। সেসব কাগজপত্র দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ঋণ নিতেন।

তিনি আরো বলেন, জয়নালের ১০টি এনআইডি ছিল। এসব এনআইডি দিয়ে সে বিভিন্ন ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতেন। এনআইডির নাম ও ঠিকানা ঠিক থাকতো শুধুমাত্র সেটির নম্বর পরিবর্তন করা। কোনোটাতে তিনি দাড়িসহ ছবি দিতেন। আবার কোনোটাতে গোঁফ, কোনটা দাড়ি-গোঁফ ছাড়া ছবি থাকতো।

হারুন অর রশীদ বলেন, জয়নাল ডিওএইচএস-এ ইআর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নেন। তিনি একই ঠিকানায় সাতটি ভিন্ন নামে এই একটি অফিস দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের আবেদন করতেন। জয়নাল এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিলেও ফেরত দেননি। আর এই টাকা দিয়ে তিনি ভাটারা এলাকায় সাততলা বাড়ি, উত্তরায় আট থেকে নয়টি ফ্ল্যাট, আশকোনা ও মাদারীপুরে একটি বাড়ি তৈরি করেন।

ডিবি প্রধান বলেন, একই জমি, একই ফ্ল্যাট ও একই অফিস দেখিয়ে ব্যাংকে ঋণের আবেদন করতেন জয়নাল। তিনি কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন এবং কয়েকটি ব্যাংক থেকে তার ঋণ প্রক্রিয়াধীন ছিল। ভুয়া এনআইডি ও নথি দিয়ে একই নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন জয়নাল। পল্লব দাস যে তার এনআইডি তৈরি করতেন, তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করেছি।

হারুন অর রশীদ বলেন, জয়নাল ভুয়া দলিল বানিয়ে জমির নামজারিও করতেন। এরপর খাজনা কপি ভুয়া তৈরি করতেন, এ জন্য তাকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা সহায়তা করতেন কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গ্রেফতার পল্লবের বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, পল্লব দাস রংপুরে এনআইডি সার্ভারে আউটসোর্সিংয়ে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ করেন। এই সুবাদে তিনি নিজের ইচ্ছামতো সার্ভারে ঢুকে এনআইডি তৈরি করে জয়নালকে সরবরাহ করতেন। পল্লব প্রতি এনআইডি তৈরি বাবদ জয়নালের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ করে টাকা নিতেন। তবে পল্লব এনআইডি বানিয়ে দিয়ে কত টাকা উপার্জন করেছেন তা খতিয়ে দেখবে ডিবি।

হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব। আমরা পল্লব দাসের মতো সার্ভার ব্যবহার করে আরও কতজন কার্যকর এনআইডি তৈরি করেছেন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। এ ছাড়া জয়নাল অন্য কোনো ব্যাংক থেকে এই ধরনের ঋণ নিয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখব। পল্লবের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

শেয়ারনিউজ, ০৭এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে