ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী পদোন্নতি চান ১০৫ উপসচিব

২০২৩ ডিসেম্বর ০৬ ০৭:০৪:৫১
জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী পদোন্নতি চান ১০৫ উপসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক : পদোন্নতির সব যোগ্যতা ও শর্ত পরিপালন করা হয়েছে। এরপরও পদোন্নতি পাচ্ছেন না ১০৫ উপসচিব। পদোন্নতি বঞিত করায় তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

পদোন্নতিবঞ্চিত এসব উপসচিবের অভিযোগ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থায় নিযুক্ত এসব উপসচিব সততা, সুনাম ও নিষ্ঠার সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সক্রিয় রয়েছেন। পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না।

জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে তাদের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবকে পৃথক চিঠি দেয়া হয়েছে। ৩ নভেম্বর এই চিঠি দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, পদোন্নতির সব যোগ্যতা ও শর্ত পরিপালন করা সত্ত্বেও এসব উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। এতে তাদের ন্যায়সংগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদের নিয়মিত ব্যাচের (বিপিএসসি’র সুপারিশকৃত প্রশাসন ক্যাডারের যে ব্যাচের সঙ্গে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন) যখন যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি হয়, তার আগেই অথবা সেই সময় এসব উপসচিব অনেকেই এই পদে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছেন।

অথচ দুঃখজনকভাবে তাদের নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তী অনেকগুলো জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তারা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ তাদের এখনও পদোন্নতি দেয়া হয়নি।

এভাবে ক্রমাগতভাবে তাদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে অজ্ঞাত কারণে বারবার বঞ্চিত হওয়ায় তাদের অনেকেই মানসিক, শারীরিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

বঞ্চিত উপসচিবদের অভিযোগ, নিয়মনীতি জেনেই তারা উপসচিব পুলে যোগ দিয়েছিলেন। নিয়মনীতির মধ্যে বলা হয়েছে, উপসচিবদের আগের কোনো ক্যাডার পরিচিতি থাকবে না এবং সব উপসচিব সম-অধিকার ও সম-মর্যাদাসম্পন্ন হবেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০০৩ সালে দেয়া রায়ে বলা হয়েছে, ‘যখনই কোনো কর্মকর্তা ২০০২ সনের বিধিমালা অনুসারে উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হইলেন, তাহা যেকোনো ক্যাডার হইতেই হউক না কেন, তিনি তখন একজন পরিপূর্ণ উপসচিব। তাহার পূর্বের ক্যাডার পরিচয় তখন বিলুপ্ত হইবে।

সচিবালয়ের উচ্চতর উপসচিব পদে তখন তিনি অধিষ্ঠান। সেই অধিষ্ঠান লইয়াই অন্য সকল উপসচিবের সহিত একশ্রেণিভুক্ত হইয়া সম-অধিকার লইয়া তিনি পরবর্তী উচ্চতর যুগ্ম সচিব পদে বা পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হইবার জন্য বিবেচিত হইবেন।’

২০০৩ সালে দেয়া রায়ে আরও বলা হয়েছে, পদোন্নতির ভিত্তি হবে মেধা, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতা। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক সুপারিশকৃত একটি ব্যাচের সম্মিলিত তালিকাই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তি।

আরও বলা হয়েছে, সরকারের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২ অনুযায়ী শর্তাবলি প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রত্যেকে নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন।

যেমন উপসচিব পদে অন্যূন পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে অন্যূন ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা। বা উপসচিব পদে অন্যূন তিন বছর চাকরিসহ ক্যাডার পদে অন্যূন ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা। সেই হিসেবে উপসচিবরা স্ব-স্ব ব্যাচের সঙ্গে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করায় তাদের এই ব্যাচের সঙ্গেই পদোন্নতি প্রাপ্য।

এই বিষয়ে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা এবং বিসিএস সিনিয়রিটি রুলস, ১৯৮৩ লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠতা হরণপূর্বক তাদের পদোন্নতি-বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, গত ৪ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ যুগ্ম সচিব পদোন্নতির আদেশে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের মোট ১৮০ জন পুলভুক্ত উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের মেধা তালিকার সর্বশেষ কর্মকর্তা (ক্রমিক নং-৩০০ ও আইডি নং-১৫৫০০) এবং সাবেক ইকোনমিক ক্যাডার থেকে প্রশাসন ক্যাডারে মার্জ হওয়া ২২তম ব্যাচের মেধা তালিকার সর্বশেষ কর্মকর্তাও (আইডি নং-২০৪১৪) পদোন্নতি পেয়েছেন।

প্রশাসন ক্যাডার থেকে পুলভুক্ত না হওয়ার কারণে সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ ব্যাচের কর্মকর্তাদের (১৩তম থেকে ২১তম ব্যাচ) এবং এমনকি ২২তম ব্যাচের কোনো কর্মকর্তাকেও পদোন্নতি দেয়া হয়নি। ফলে তাদের জ্যেষ্ঠতা হরণ করা হয়েছে এবং ক্যাডার বা শ্রেণি বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

উপসচিবদের অভিযোগ, তারা উপসচিব হিসেবে যোগদানকালে ইকোনমিক ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে মার্জ হয়নি। উপসচিব হিসেবে কর্মকালীন ইকোনমিক ক্যাডারের অনেক জুনিয়র কর্মকর্তাই তাদের অনেকের অধীনে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হয়।

তারপরই পদোন্নতি বিধিমালা লঙ্ঘন করে তাদের প্রথমে সরকারের পুলভুক্ত উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। উপসচিব পদে এক দিনও কাজ না করেই ২ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে এবং যুগ্ম সচিব পদে এক দিনও কাজ না করেই ৩ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। এক দিনও সরকারের পুলভুক্ত পদে চাকরি না করে পদোন্নতি পেয়েছেন ইকোনমিক ক্যাডারের এসব কর্মকর্তা।

অথচ তারা মাত্র ৫০০ নম্বর পরীক্ষা দিয়ে টেকনিক্যাল ক্যাডার হিসেবে চাকরি পান। আর ১ সেপ্টেম্বর ইকোনমিক ক্যাডার একীভূত হওয়ার আগে আমাদের অনেকেই পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও পদোন্নতির জন্য আমাদের কাউকেই বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

তাদের অভিযোগ, ইকোনমিক ক্যাডার সরকারের পুলভুক্ত পদের (উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব) সঙ্গে একীভূত হয়নি। একীভূত হয়েছে একটি নির্দিষ্ট ক্যাডার তথা প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে।

অর্থাৎ এক্ষেত্রে তাদের শুধু প্রশাসন ক্যাডারের নিজস্ব লাইনভুক্ত পদেই (যেমন, সহকারী কমিশনার থেকে বিভাগীয় কমিশনার) পদোন্নতি ও পদায়িত হওয়ার কথা। অথচ কেবল প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত হওয়ার কারণেই অন্য সব ক্যাডারকে বিবেচনায় না নিয়ে শুধু সাবেক ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পুলভুক্ত উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদসমূহে বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। এমনকি ইকোনমিক ক্যাডারের যেসব কর্মকর্তা এর আগে আমাদের সঙ্গে সরকারের উপসচিব পদে পুলভুক্ত হয়েছিলেন এবং আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী যাদের পূর্ববর্তী ক্যাডার পরিচিতি বিলুপ্ত হয়েছিল, তাদেরও সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে রাতারাতি নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান করা হয়।

এমনকি ওই তারিখে সরকারের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২ অনুযায়ী তাদের অধিকাংশেরই পদোন্নতির চাকরিকাল বা ফিডারও পূর্ণ হয়নি। এই ধরনের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন এবং ক্যাডার একীভূতকরণের নামে অবৈধভাবে সরকারের পুলভুক্ত পদসমূহ হরণ করার বিষয় এসব উপসচিবকে পুলভুক্তির সময় কিংবা পরবর্তীতেও অবহিত করা হয়নি, যা কেবল বিদ্যমান আইন ও বিধিমালার ব্যত্যয়ই নয়, বরং তা প্রচলিত আইনেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

সেজন্য সরকারের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়, বিসিএস সিনিয়রিটি রুলস, ১৯৮৩ ও সংবিধান অনুসরণ করে এসব উপসচিবকে যার যার নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা প্রদানপূর্বক যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

শেয়ারনিউজ, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে