ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য দুঃসংবাদ

২০২৩ নভেম্বর ০৫ ১২:৪১:১৫
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য দুঃসংবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য দুঃসংবাদ! দেশে দেশে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া নানা ব্র্যান্ডের পোশাক। ‘স্বাস্থ্যঝুঁকির’ অজুহাতে এসব পোশাক বিক্রি বন্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বিক্রেতাদের।

চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে কানাডায়। দেশটির সরকার বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া জর্জ ব্র্যান্ডের ২ লাখ ১৬ হাজারের বেশি পোশাক ক্রেতাদের কাছ থেকে ফেরত নিতে বলেছে বৈশ্বিক চেইনশপ ওয়ালমার্টকে।

কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, জর্জ ব্র্যান্ডের রাতে পরার পোশাকের জিপারের বর্ধিতাংশ ভেঙে যেতে পারে এবং পায়ের ও গলার গ্রিপ বারবার ধোয়ার ফলে চেপে যেতে পারে, যা ওই পোশাক পরা ব্যক্তির দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

এর আগে গত ৩ অক্টোবর কানাডা সরকার সে দেশের সরকারি ওয়েবসাইটে এই ব্যাপারে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে যাওয়া জর্জ ব্র্যান্ডের এসব পোশাক ওয়ালমার্টে ফেরত দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওয়ালমার্টে বিক্রির জন্য জর্জ ব্র্যান্ডের এই পোশাকগুলো তৈরি হয়েছে গাজীপুরের ইউনিক ডিজাইনার্স লিমিটেড নামের একটি কারখানায়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন মাসের দিকে পোশাকগুলো সরবরাহ দেওয়া হয়।

বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক নীতি সহায়তা প্রদান করা সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) তথ্যমতে, কানাডা ছাড়াও চলতি ২০২৩ সালে ১১টি দেশের বাজার থেকে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া পোশাক উঠিয়ে নিতে বাধ্য করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।

এর কারণ হিসেবে একেক দেশে একের ধরনের অজুহাত তুলে ধরা হয়েছে। আবার অনেক দেশে বিক্রীত পোশাক গ্রাহকদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওইসিডির তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে পোশাক পরার কারণে শ্বাসরোধ ও আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা, ঢিলেঢালা হওয়ার কারণে আগুনের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি, পোশাকে অতিমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ থাকা, আগুন প্রতিরোধী মান নিশ্চিত না হওয়া প্রভৃতি।

ওইসিডির তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া পোশাক জনস্বার্থে বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০২২ সালে এই রকম ঘটনা ঘটেছে চারবার এবং ২০২১ সালে পাঁচবার। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১২টি ঘটনা ঘটেছে।

এই বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে এবং গ্রাহকদের ফেরত দিতে বলা হয়েছে—এমন দেশগুলোর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, বুলগেরিয়া ও সাইপ্রাস।এই দেশগুলোতে ছয়টি বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক ক্রয় করে। ব্র্যান্ডগুলো হলো জর্জ, টার্টলডোব লন্ডন, স্পোর্টল্যান্ড, টার্গেট অস্ট্রেলিয়া, বাচ্চাদের পোশাক বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান কিকি অ্যান্ড কোকো, মাগলিয়া ব্যামবিনো, রেট্রো জিনস, ব্রোকার্স অ্যাথলেটিক, যুক্তরাষ্ট্রের সেলফি ক্র্যাফ্ট কোম্পানি এবং সাইপ্রাসের একটি কোম্পানি।

ফ্যাশন ব্র্যান্ড টার্টলডোব লন্ডন বাংলাদেশ থেকে শিশুদের পরার জন্য পায়জামা নিয়ে যায়। কিন্তু এই পোশাকে ধাতুর তৈরি বোতাম আছে, যা ছিঁড়ে যেতে পারে। এই বোতাম শিশুরা মুখে দিলে নিশ্বাস আটকে যেতে পারে।

বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রেজিস্ট্রেশন, ইভালুয়েশন, অথরাইজেশন অ্যান্ড রেস্ট্রিকশন অব কেমিক্যালের (আরইএসিএইচ) নজরে এনেছে স্লোভাকিয়া।

আরইএসিএইচ পরে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে শিশুদের এসব পায়জামা বিক্রি বন্ধ রেখেছে।

অন্যদিকে স্পোর্টল্যান্ডের আমদানি করা শিশুদের হুডির (মাথা ঢাকা পোশাক) বিষয়ে বলা হয়েছে, পোশাকে যে দড়ি আছে, তা শিশুরা বিভিন্ন কাজ করার সময় গলায় আটকে গিয়ে নিশ্বাস নিতে সমস্যা হবে। আরইএসিএইচের নির্দেশে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে এই হুডি তুলে নিয়েছে।

স্পোর্টল্যান্ডের আরেকটি পণ্য জাম্পারও শিশুদের ব্যবহারের বিষয়ে একই অভিযোগ এনে বাজার থেকে তুলে নেওয়ার আদেশ দিলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান পণ্যগুলো তুলে নেয়।

অন্যদিকে টার্গেট অস্ট্রেলিয়া দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা অস্ট্রেলিয়ান কম্পিটিশন অ্যান্ড কনজ্যুমার কমিশনের অনুরোধে বাংলাদেশ থেকে নেওয়া পায়জামা সেট, ডিজনি ব্যাম্বি পায়জামা সেট বিক্রি করে ফেলার পরও ক্রেতাদের কাছ থেকে ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, পায়জামাগুলো ঢিলেঢালা হওয়ার কারণে তাপ ও গরমের সংস্পর্শে আসার ফলে আগুন লেগে যেতে পারে।

প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তুলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৯টি দেশ তাদের বাজার থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন পোশাক তুলে নিয়েছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে নির্দেশ দিয়েছে, তা নিয়ে রীতিমতো বিস্মিত বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে একটা ঘাপলা আছে। বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির আগে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়।

পোশাকে কোনো রাসায়নিক পদার্থ ও জীবনের জন্য হুমকি আছে—এমন কোনো কিছুর উপস্থিতি পাওয়া গেলে ক্রেতারা নিশ্চয়ই জাহাজীকরণের আদেশ দিত না। এখন পণ্য বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর ফেরত দিতে বলাটা খুবই সন্দেহজনক। এর পেছনে অন্য কিছু থাকতে পারে।’

শেয়ারনিউজ, ০৫ নভেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে