ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

বেসিক ব্যাংকের বাচ্চুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

২০২৩ অক্টোবর ২১ ১৯:০৫:৪৫
বেসিক ব্যাংকের বাচ্চুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : জমি কেনার নামে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু শতকোটি টাকা বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন অভিজাত হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ। একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে ফাঁকি দিয়েছেন সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এ ঘটনায় আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী-সন্তান ও অভিজাত হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সংস্থার ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নূরুল হুদা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বাচ্চুর অপকর্মের দায়ে প্রথমবারের মতো দুদকের জালে ফাঁসলেন তার স্ত্রী-সন্তানরা।

মামলার আসামিরা হলেন- বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই ওরফে বাচ্চু, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, বাচ্চুর ছেলে শেখ রাফা হাই, শেখ সাবিদ হাই অনিক ও হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালের ৮ জুলাই আসামি শেখ আবদুল হাই বাচ্চু অপর আসামি আমিন আহমেদের সঙ্গে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের কাছে ৬ নম্বর প্লট ৩০.২৫ কাঠা জমি কেনার চুক্তি করেন। জমির দাম নির্ধারণ করা হয় ১১০ কোটি টাকা। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ১০ কোটি টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী জমি দুটি দলিলে রেজিস্ট্রি করা হয়। যার মধ্যে ১৮ খাতা জমির দাম উল্লেখ করা হয় ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম নথিতে ৯ কোটি টাকা। যেখানে প্রাপক হলেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও শিরিন আখতার।

একই বছর আরেক দলিলে ১২.২৫ কাঠার দাম ধরা হয়েছে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যেখানে গ্রহীতা শেখ সাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। জমির রেজিস্ট্রি মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে অবৈধ আয় গোপন করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ জমি বিক্রি ও বাজারদর গোপন করতে বাচ্চুকে সহায়তা করেন। ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু তাদের আয়কর নথিতে জমির দাম দেখানো হয়েছে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। অর্থাৎ শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর আয়-ব্যয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে বিরাট অমিল রয়েছে। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ঋণ দিয়ে কমিশন বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।

আত্মসাৎ করা অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে গোপন করেছেন। তার এই অবৈধ অর্থের বৈধতা প্রদানে সহায়তা করেছেন লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ। যা অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে এই ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিয়ে একবার সংসদ-সদস্য হয়েছিলেন শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। এরপর তাকে আর সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান আব্দুল হাই বাচ্চু। চেয়ারম্যান থাকাকালেই তিনি ২০১২ সালে বেস্ট হোল্ডিং গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদের সঙ্গে বাড়িটি কেনার বায়না চুক্তি করেন।

বায়না চুক্তি অনুযায়ী জমির মালিকানা যে ৫ জনের নামে তারা হলেন-শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু (৬.২৫ কাঠা), শেখ শাহরিয়ার পান্না (৬ কাঠা), শেখ শিরিন আক্তার (২ কাঠা), শেখ সাবিদ হাই অনিক (৮ কাঠা) ও শেখ রাফা হাই (৮ কাঠা)। এই প্রথম দুর্নীতির অভিযোগে বাচ্চু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করল দুদক।

শেয়ারনিউজ, ২১ অক্টোবর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে