ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

ট্রাফিক সিগন্যালে এআই, আইন লঙ্ঘন করলেই অটো মামলা

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২৬ ১৭:০১:১৩
ট্রাফিক সিগন্যালে এআই, আইন লঙ্ঘন করলেই অটো মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইন্টারসেকশন ট্রায়াল ভিত্তিতে ঢাকার গুলশান-২ সিগন্যালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিগন্যাল সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সব ধরনের যানবাহনের গতিবিধি মনিটরিং করা হচ্ছে। সিগন্যাল ছাড়ার আগে এবং পরে কতগুলি গাড়ি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করেছে তা এআই ক্যামেরা দেখাচ্ছে।

তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে শুধু এই সিগন্যালে তিন লাখ যানবাহন ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ১৭টি পয়েন্টে এ ব্যবস্থা চালু করা হবে। সম্পূর্ণরূপে চালু হলে মামলা স্বয়ংক্রিয় হবে।

যানজট নিরসন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে এ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ওই এলাকার যানজট পর্যবেক্ষণ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা ভয়াবহ। আইন ভঙ্গ করেছে তিন লাখ যানবাহন। কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনের হারে দেখা যাচ্ছে, এ ব্যবস্থা চালু হলে রাজধানীজুড়ে যানজট যেমন কমবে, অন্যদিকে পার্কিং বা ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতাও কমবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারপর সিস্টেমে সিগন্যাল আসবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীতে প্রতিদিন গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকার সড়ক বাড়ছে না। বরং অনেকাংশে কমছে রাস্তা। যানজটের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি যেমন বাড়ছে, কর্মঘণ্টাও বাড়ছে। ঢাকা মহানগরীর বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটির দিনেও সড়কে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভালো না হলে ঢাকার যতই উন্নয়ন হোক না কেন, তা চলবে না। এআই চালু হওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা হাত দিয়ে যে ট্রাফিক সিগন্যাল দিতেন তা আর প্রয়োজন হবে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ঢাকা শহরে ২০২০ সালে নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ২৫৪টি, ২০২১ সালে এক লাখ ৫০ হাজার ৫৬১টি, ২০২২ সালে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৮১২টি এবং চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৮৭ হাজার ৩৬২টি।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে মোটরসাইকেল, এক লাখ ২০ হাজার ৮৪৮টি। এরপরে রয়েছে প্রাইভেটকার ১৪ হাজার ৯৪৬টি, জিপ গাড়ি ৯ হাজার ৩৫০টি এবং মাইক্রোবাস রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৬ হাজার ৬৯৫টি। অর্থাৎ, বিআরটিএর পরিসংখ্যানেই দেখা যায়, প্রতি বছর ঢাকা শহরে হু হু করে বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। কিন্তু সেই তুলনায় তৈরি হচ্ছে না নতুন রাস্তা। বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও ঢাকা শহর দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে আরও অনেক গাড়ি।

লালবাতি জ্বলা অবস্থায় সাদা দাগ অতিক্রম করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাফিক মামলা হবে জানিয়ে গুলশান-২ নম্বর সিগন্যালে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলেন, এ প্রযুক্তির ফলে অনেকেই সচেতন হয়েছেন। এতে ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা কমে আসবে ৯৯ শতাংশ। লালবাতি জ্বলা মাত্র সবাই সতর্ক হয়ে যাবেন। এই আধুনিক ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশের কষ্টও কমে আসবে অনেকাংশে।

গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, গুলশান-২ নম্বর সিগন্যালে পরীক্ষামূলকভাবে সিটি করপোরেশন এ পদ্ধতি চালু করেছে। তবে আগে যে টাইমিং সিস্টেম ছিল সেটি এখন আর নেই। ফলে সাধারণদের মধ্যে কিছুটা লাল, হলুদ আর সবুজ বাতি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ট্রাফিক সদস্যদেরও কাজের পরিধি বেড়েছে। তবে ইন্টেলিজেন্স ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এআই সিস্টেম ঢাকা শহরের একযোগে সবকয়টি পয়েন্টে চালু হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। কারণ রাজধানীর প্রতিটি সড়ক একটির সঙ্গে আরেকটি লিংক।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা বলেন, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত করা হবে। এটি প্রাথমিকভাবে গুলশানসহ ১৭টি পয়েন্টে চালু করা হবে।

শেয়ারনিউজ, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে