ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

দুদকের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

২০২৩ আগস্ট ১৭ ১৮:২৬:৩৩
দুদকের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরি করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি লালবাগ বিভাগ। গত সোমবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবী। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. সেলিম ওরফে তানভীর ইসলাম ওরফে শফিকুর রহমান (৩৯), মো. সোহাগ পাটোয়ারী (৩৮), আব্দুল হাই সোহাগ (৩৮) এবং মো. আজমীর হোসেন (৩৭)।

এ সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৭টি মোবাইল, ১০টি সিম, বাংলা টিভি ৭১-এর কর্ডলেস মাউথ পিস, পত্রিকা, মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাতটি ভুয়া আইডি কার্ড, দুদক কর্তৃক বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের ১২টি প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির ফোন নম্বর লেখা তিনটি নোটবুক জব্দ করা হয়।

খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, দুদকের নামে ঘুষগ্রহণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম রমনা থানায় গত ১৩ আগস্ট মামলা করেন। এর পরদিন যাত্রাবাড়ী, মুগদা ও এয়ারপোর্ট এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে দুদকের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নামে অভিযোগ নিষ্পত্তির আশ্বাসে ঘুষ হিসেবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, কোনো ব্যক্তি হঠাৎ করে সম্পদশালী হলে তাঁদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে এবং মোবাইল ফোনের নম্বর সংগ্রহ করে তাঁদের বিরুদ্ধে দুদক বরাবর ভুয়া অভিযোগ তৈরি করে, অভিযোগ বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তাঁদের কাছে পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি ও আদায় করে ভুয়া তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে তাদের ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাঠাত।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে এক আসামি একসময় রডমিস্ত্রির কাজ করে পরে নির্মাণকাজের ঠিকাদার ছিল। বর্তমানে দুদকের প্রধান কার্যালয়, বিভিন্ন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী, হিসাবরক্ষক, সার্ভেয়ারদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার কাজ।

তিনি আরও বলেন, আসামি সোহাগ পাটোয়ারী একসময় ম্যানেজমেন্ট ও ডিজে পার্টিতে কাজ করতেন। সেই থেকে বিভিন্ন মেয়ে এবং দালালদের সঙ্গে তার নানা রকম সখ্যতা গড়ে ওঠে। দুদকের ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের নামে গঠন করা অভিযোগ, অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি সংক্রান্ত চিঠি ডাউনলোড করে তিনি পাঠাতেন প্রতারক সেলিমের কাছে। তা ছাড়া টার্গেট করা প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের নামে দুর্নীতির অভিযোগের চিঠি বানিয়েও পাঠাতেন। সেলিম এভাবে প্রাপ্ত ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর গ্রেপ্তার প্রতারক আব্দুল হাই ও আজমির হোসেনকে দিয়ে সংগ্রহ করাতেন। তারপর দুদকের কমিশনার, মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপপরিচালকদের নাম ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ করতেন তাঁরা ৮০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন। এক্ষেত্রে তাঁরা দুদক কার্যালয়ের সামনে অথবা সেগুনবাগিচাস্হ নাট্যমঞ্চ এলাকার আশপাশে টার্গেট ব্যক্তিদের আসতে বলে ক্যাশ অথবা নগদ ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকাগুলো হাতিয়ে নিতেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা লাখ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। এভাবে তাঁরা এক বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মাদকাসক্ত এবং অসামাজিক কাজে অভ্যস্ত আসামিরা মুহূর্তেই টাকা খরচ করে নতুন প্রতারণায় হাত দিতেন। আসামিরা বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, এখন পর্যন্ত এই চক্রের সঙ্গে দুদকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

শেয়ারনিউজ, ১৭ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে