ঢাকা, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

মুসলিম তরুণ-তরুণীকে ‘খ্রিস্টান’ বানানোর অভিযোগ

২০২৫ নভেম্বর ০৭ ১১:০৫:০৯
মুসলিম তরুণ-তরুণীকে ‘খ্রিস্টান’ বানানোর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের চৌগাছা উপজেলায় সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে প্রায় শতাধিক মুসলিম তরুণ-তরুণীকে মিথ্যা প্রলোভন ও হুমকির মাধ্যমে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোতে চরম অস্থিরতা ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা স্থানীয় প্রশাসন ও ধর্মীয় নেতাদের নজরে এসেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পিকনিক বা প্রশিক্ষণের নাম করে চৌগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ১০০ জন মুসলিম তরুণ-তরুণীকে গাজীপুরের অদূরে একটি চার্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের মাথায় জল ঢেলে বাপ্তিস্ম করা হয়, বাইবেল ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং জোরপূর্বক যিশুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলা হয়। যারা ধর্মান্তরিত হতে রাজি হননি, তাদের বলা হয়েছে যে তারা আর মুসলিমও নন, খ্রিষ্টানও নন। এমনকি, কলেমা না পড়লে বা কালেমা পড়লেও তাদের খ্রিষ্টান ধর্মে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

এই ঘটনার শিকার হয়ে অনেক তরুণ-তরুণীর জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ সংকট। দশম শ্রেণির ছাত্র আক্তারুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, এ ঘটনার পর থেকে তিনি লোকলজ্জার ভয়ে ঘরবন্দী এবং সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে চেয়েছিলেন। খাদিজা খাতুন নামের এক গৃহবধূর পরিবারেও নেমে এসেছে অশান্তি। তার স্বামী তাকে তালাক দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন এবং খ্রিষ্টান ধর্মে রূপান্তরিত না হলে তাকে গ্রহণ করবেন না বলেও জানাচ্ছেন। খাদিজার মা কান্নায় ভেঙে পড়ে জানান, তার মেয়ে এখন খ্রিষ্টান হতে চাপের মধ্যে আছে, এবং তার জামাই বিদেশ থেকে ফিরলে তার মেয়েকে ডিভোর্স দেবে বলে জানিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, "দীপ্ত সমাজ কল্যাণ সংস্থা" নামের একটি এনজিও এই ধর্মান্তর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। বাবুলুর রহমান নামের একজন ব্যক্তি এই চক্রের মূল সমন্বয়কারী, যিনি ১২-১৩ জনের একটি দলের বস হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ১০ লাখ টাকা এবং চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তরুণ-তরুণীদের ধর্মান্তরিত করার কাজটি করেন। নাসিমা বেগম নামের একজন এনজিও কর্মী, যার পরিচয়পত্রও পাওয়া গেছে, তিনি জানিয়েছেন যে তাকে শুধুমাত্র প্রশিক্ষণের জন্য লোক জোগাড় করতে বলা হয়েছিল এবং ধর্মান্তরকরণ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

ইসলামী চিন্তাবিদ কারিক বিন সুমাদ জানান যে, কৌশল করে বা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ম প্রচার ইসলামে নিন্দনীয়। যারা কৌশলে ধর্মান্তর করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, যারা ভুল বুঝে বা চাপে পড়ে ধর্মান্তরিত হয়েছেন, তাদের জন্য তিন দিনের সময় থাকে তওবা করার জন্য। আল্লাহ তওবা কবুলকারী এবং তাদের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসাকে গ্রহণ করবেন। ফাদার জেমস নামের এক খ্রিষ্টান ধর্মগুরু বলেন, ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয় এবং জোর করে বা প্রলোভন দেখিয়ে কাউকে ধর্মান্তরিত করা যায় না। তিনি বাবুলুর রহমানকে চেনেন না এবং তার চার্চে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের বিষয়টি তিনি জানেন না।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন যে, প্রাথমিক তদন্তে কয়েকটি বাচ্চার নাম পাওয়া গেছে এবং ঘটনার সত্যতা মিলেছে। তিনি বলেন, যদি কোনো পরিবার থানায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়, তাহলে পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজাহারুল ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে অবগত জানিয়ে বলেন, এটি একটি ধর্মীয় বিষয় এবং প্রশাসন আলেমসমাঝের সাথে আলোচনা করে এর সমাধান খুঁজবে। তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এবং জোরপূর্বক বা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরকরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে